দেশের আলোচিত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বরখাস্তকৃত মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সেই ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে সাত মামলায় আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া এসব মামলার অভিযোগপত্র নগরীর কোতোয়ালি থানায়ও পাঠানো হয়েছে। তবে দুই বছর আগে এসব মামলায় মৃধাকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক।
বৃস্পতিবার অধিকতর তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্রগুলো জমা দেন বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ভূঁইয়া।
তদন্তকারি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা সাতটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে ও সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিয়েছি। অভিযোগপত্রে ইউসুফ আলী মৃধা এবং রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ওয়েলফেয়ার অফিসার গোলাম কিবরিয়াকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. শাহে নূর ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে দায়ের করা সাত মামলার নথি অধিকতর তদন্তের জন্য দুদকে ফেরত পাঠান। এসব মামলায় মৃধাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি সাতটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুমোদন দেয় বলে জানান তিনি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, এ সাতটি মামলার মধ্যে কার্পেন্টার, সিনিয়র ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর ও গুডস সহকারী পদে নিয়োগে অনিয়মের মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ভূঁইয়া। দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক এই পরিচালক বর্তমানে রাজশাহীতে পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এছাড়া রেকর্ড কিপার, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস, শরীরচর্চা শিক্ষক ও রেলওয়ের আদালত পরিদর্শক পদে নিয়োগে অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ রাসেল। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
জানা যায়, ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকায় বিজিবি হেডকোয়ার্টারে টাকার বস্তাসহ আটক হন তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ফারুক। এই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দুদক তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধারও সম্পৃক্ততা পায়। রেলের ১৩টি ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৬৯ জন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের তথ্য পায় দুদক। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরীর কোতোয়ালী থানায় ইউসুফ আলী মৃধাসহ একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে ১৩টি দুর্নীতির মামলা করে দুদক। ২০১২ সাল থেকে দুই বছর পলাতক ছিলেন ইউসুফ আলী মৃধা। পরে ২০১৪ সালের ৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। সেই থেকে কারাগারে আছেন মৃধা। মৃধার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিচার শুরু হয়েছে। বিচার শুরু হওয়া মামলাগুলো হলো-ফুয়েল চেকার, সহকারী কেমিস্ট, টুল কিপার, টিকিট ইস্যুয়ার ও ট্রেন নাম্বার চেকার পদে নিয়োগ দুর্নীতির মামলা।