আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতার সিংহাসনের জন্য বেশামাল, বেপরোয়া হয়ে গেছে। এখন তারা নিজেদের ঘোলা করা পানি খাবে। বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই। বিএনপি তার অস্তিত্বের প্রয়োজনেই নির্বাচনে আসবে।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
এর আগে সকালে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সারাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চারদিক থেকে বিভিন্ন চাপে এমন কিছু কথা বলছেন, যা শুনে শিহরণ জাগে। তিনি (ফখরুল) বলেছেন, আমরা নাকি ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চাই। ভয় দেখানোর দরকারটা কি? কি প্রয়োজন? আমরা বলেছি বিএনপি নির্বাচনে আসবে তাদের প্রয়োজনে। আর একটা নির্বাচনে না আসলে তাদের রাজনীতি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে তারা সেটা জানে। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গ ত্যগ না করলে বিএনপি ডুবে যাবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষাক্ত আলিঙ্গন আপনাদের ডোবাবে। এই আলিঙ্গন থেকে ছুটতে না পারলে রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন।
আওয়ামী লীগ কঠিন সময় পার করছে দাবি করে তিনি বলেন, সামনে আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিরোধ করা। তারা এখনো তলে তলে ভয়াবহ প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমরা যদি মনে করি তারা নিষ্কৃয় হয়ে গেছে তবে আমরা ভুল করছি। কঠিন সময় পার করছি এখন আমরা। এরপরও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগ এখন ‘স্মার্টার এন্ড স্টংগার’। তবে আওয়ামী লীগ এখনো নির্ভুল ও ভিতরের সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। যে কারণে গতকাল (সোমবার) তিনটি উপজেলা নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। কারণ হচ্ছে প্রতিটিতেই আমাদের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল।
৭ মার্চ সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীতে একক একটি দেশের স্বাধিকার সংগ্রামকে মুক্তির সংগ্রামে পরিণত করেছিলো। এর দৃষ্টান্ত দুনিয়ার কোথাও নেই। আব্রাহাম লিংকনের গেটিস বার্গে দেয়া ভাষণ ছিলো লিখিত। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ ছিলো সম্পূর্ণ অলিখিত ও উপস্থিত। এটা লিখিত নয়, এটা ছিলো উপস্থিত। যে বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনের পরও ছিলো আওয়ামী লীগ নেতা, এই ভাষণের পর তিনি হলেন সকল বাঙালীর আস্থার ঠিকানা। ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণ ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। অথচ বিএনপির এটা উপলব্ধি করে না। আসলে এটা চেতনার ব্যাপার, মূল্যবোধের ব্যাপার, অনুভূতির ব্যাপার। যা বিএনপির নেই। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ মানে না বলেই ৭ মার্চ পালন করে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, এদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিধ্বনি জয়বাংলাও এখন আওয়ামী লীগের শ্লোগান। একাত্তর সালে এই শ্লোগান ছিলো মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি। এখন সেটা আওয়ামী লীগের দিকে সবাই ফেলে দিয়েছে। তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ কি শুধু আমাদের? এখন আমরা আওয়ামী লীগারাই উচ্চরণ করি, অন্যরা করেন না। বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক সত্যই অনেকে স্বীকার করেন না। ইতিহাস নিয়ে অনেকেই কানামাছি খেলেন। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলেই ইতিহাস জবর-দখল করার পায়তারা করেন। ক্ষমতায় এলেই ইতিহাস নিয়ে কানামাছি খেলেন। ক্ষমতায় এলেই তারা বিজয় দিবসকে স্মরণ করেন, বিজয়ের মহানায়ককে নিষিদ্ধ করে। তারা স্বাধীনতা দিবস পালন করেন, স্বাধীনতার স্থপতিকে নিষিদ্ধ করে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইতিহাস নিয়ে কানামাছি খেলে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল হোসেন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দেলোয়ার হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, মহানগরের একেএম রহমতউল্লাহ, শাহে আলম মুরাদ, সাদেক খান, ডা. দীলিপ রায়, আবদুল হক সবুজ, শেখ বজলুর রশিদ, নজিব সরদার, এসএ মান্নান কচি, কাদের খান, আকতারুজ্জামান, আজিজুল হক রানা, ছাত্রলীগের বায়েজিত আহমেদ খান প্রমুখ।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত: অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন ভোরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, কনসার্ট, শোভাযাত্রা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দিবসটির কর্মসূচি শুরু করে। সকাল ৭টায় আওয়ামী লীগ নেতারা ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসীম কুমার উকিলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী দল ও সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ মার্চ, ২০১৭/মাহবুব