আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর রামঘাটলায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ১৩ পৃষ্ঠার একটি একটি ইশতেহার পাঠ করেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা। নির্বাচিত হলে তিনি ২৯টি পয়েন্টে উন্নয়ন করবেন উল্লেখ করে যানজট জলাবদ্ধতা নিরসনসহ কুমিল্লাকে আধুনিক নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত কোন করের বোঝা জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হবেনা। অতি দরিদ্রদের হোল্ডিং কর মওকুফ করা হবে।
শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে, বাস্তবমুখী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এ শহরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করবো।
নগরের অসহনীয় যানজট নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ফুটপাথ সমূহ জনগণের চলাচল উপযোগী করা হবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে রুপকল্প ২০২১ মাথায় রেখে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের জন্য উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। সেই পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এগুলো হবে মান সম্মত এবং অলাভজনক। কর্মজীবী তরুণ-তরুণীদের কথা বিবেচনায় রেখে একটি নৈশ মহাবিদ্যালয় চালু করা হবে। সিটি করপোরেশনের পূর্বাঞ্চলে মেয়েদের জন্য একটি মানসম্মত মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া কলেজে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে সদর দক্ষিণ এলাকায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এ সমস্ত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে কুমিল্লার হৃতগৌরব এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা রাখি।
চিকিৎসার বিষয়ে বলেন, উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর অনেক মা ও শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে সর্বাধুনিক সুযোগসুবিধা সম্বলিত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সেখানে স্বল্প খরচে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচালিত স্যাটেলাইট ক্লিনিক সমূহের চিকিৎসা সেবার পরিধি বৃদ্ধি করা হবে।
এদিকে কুমিল্লায় কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এ সকল নারীদের আবাসন সংকটের কথা বিবেচনায় রেখে একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন করা হবে।
ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করা হবে। দ্রুততম সময়ে নকশা অনুমোদন করা হবে।
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি স্বল্পাকৃতির ময়লা কাগজ ইত্যাদি ফেলার জন্য মূল সড়কের পাশে ক্ষুদ্রাকৃতির ঝুড়ি স্থাপন করা হবে। বর্জ্যকে বোঝা না মনে করে সম্পদে পরিণত করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে।
সরকার এবং জনসাধারণের সহায়তা নিয়ে কুমিল্লার পরিছন্ন রূপটি ফিরিয়ে এনে কুমিল্লা মহানগরকে নান্দনিক শহরে পরিণত করবো।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চলাচল অনুপযোগী সড়ক সমূহ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন সকল কাঁচা সড়ক পর্যায়ক্রমে পাকা করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর দক্ষিণ কুমিল্লা সিটি করর্পোরেশনের অংশ হলেও গত পাঁচ বছরে সেখানকার দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। সদর দক্ষিণের উন্নয়নের জন্য মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সদর দক্ষিণের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। সদর দক্ষিণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেখানে সিটি করপোরেশনের অচল আঞ্চলিক কার্যালয়টিকে সচল করা হবে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেডিযাম নির্মাণ করা হবে, এতে কুমিল্লাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ তৈরি হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে ৫ তারকা হোটেল স্থাপনে জমি বরাদ্দ করে সহযোগিতা করা হবে।
জেলা পরিষদের সহযোগিতা নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি মুক্তমঞ্চ স্থাপনসহ পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেনটিকে একটি নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হবে। যাতে করে দর্শনার্থীরা একটি মনোরম পরিবেশে বেড়াতে পারেন।
আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নগরবাসীর সংস্কৃতি চর্চা ও বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। বিদ্যমান মিলনায়তন সমূহের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে।
কুমিল্লার খ্যাতিমান ব্যক্তি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নগরের বিভিন্ন সড়ক সমূহের নামকরণ করা হবে।
নগরের সড়ক সমূহকে রাতের বেলা নিরবচ্ছিন্নভাবে আলোকিত রাখার ব্যবস্থা করা হবে। মাদকমুক্ত কুমিল্লা গঠনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সন্ত্রাসমুক্ত নগর গঠনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।
কুমিল্লাতে একটি আইটি পার্ক স্থাপন করা হবে। যাতে করে নতুন প্রজন্ম আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আয়ের উৎস খুঁজে নিতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সমূহকে ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হবে।
বেকারত্ব দূরীকরণ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ গ্রহণ ও সহায়তা করবে।
শহরের চারপাশে বৃত্তাকার সার্কুলার রোড নির্মাণ করা হবে। এতে মূল শহরের উপর যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পাবলিক টয়লেট স্থাপন এবং সেগুলো সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাঁচা বাজার গুলোর সংস্কার ও মানবৃদ্ধি করা হবে। বিশেষ করে সরকারের সহযোগিতা পেলে রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজারটিকে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বাজারে পরিণত করা হবে। বাজারগুলিতে নান্দনিক স্থাপনা তৈরির মাধ্যমে কুমিল্লাবাসীর জন্য এর বহুমূখী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
ধর্মীয় স্থাপন সমূহ মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, কবরস্থান, শশ্মান ইত্যাদি সংরক্ষণে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে কোন প্রকার নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হিমালয় পাহাড়ের মতো প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে দাঁড়াবো। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান সকলকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লাকে একটি অসাম্প্রদায়িক পরমতসহিষ্ণু শহর হিসেবে গড়ে তুলবো।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সকল ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল সম্পূর্ণ মওকুফ করা হবে। নগরজুড়ে প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা হবে।
প্রতি তিন মাস পরপর একবার জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। যাতে করে বিগত কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণের মূল্যায়ন এবং আগামী কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা যায়। এর মাধ্যমে করপোরেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী হিসাবে মেয়র নির্বাচিত হলেও কখনই দলের বা পরিবারের মেয়র হব না। আপামর কুমিল্লাবাসীর মেয়র হব। জনসাধারণের জন্য মেয়রের কার্যালয় উন্মুক্ত থাকবে। রাগ বা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কখনও মেয়রের কর্মকান্ড পরিচালনা করবো না। বিগত দিনে যারা সিটি করপোরেশন/পৌরসভার নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সকলের প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেব। নাগরিক সেবা প্রদান এবং নাগরিক সন্তুষ্টি বিধানই হবে আমার কার্যক্রমের মূল ভিত্তি।
সীমার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মেয়র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কাজী জাফর উল্লাহ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেদ প্রশাসক ওমর ফারুক, কুমিল্লা দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাত উপস্থিত ছিলেন।