ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করলেও প্রাকৃতিক দুর্ভোগ কাটছেই না। ঘুর্ণিঝড়ের পর এবার চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গী হয়েছে জলাবদ্ধতা ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়। তাছাড়া ভারীবর্ষণের পানির স্রোতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বেঙ্গুরা স্টেশনের কাছের বোয়ালখালী খালের ওপর ২৪ নম্বর রেলওয়ে সেতু ধসে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেল যোগাযোগ।
এদিকে, নগরের ঝুকিপূর্ণ পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসনের দুই নির্বাহী ম্যাজিসস্ট্রেট।
জেল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘুর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী উপজেলা সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালি, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, মীরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় মোট ১৪ হাজার ২৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া ২ হাজার ৭৪৫টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ২ হাজার ৫৯৬টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে। নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় সমুহে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত করেছেন। তাছাড়া সার্বিক বিষয়ে আমরা তদারকি করছি।’
আবহওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত ২২৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বৃষ্টিতে নগরের অধিকাংশ নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া কর্মকর্তা বিশ্ব¦জিৎ চৌধুরী বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ২২৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়া আরো দুয়েকদিন থাকতে পারে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টিতে নগরীর নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়। সড়ক ও অলিগলিতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর বাকলিয়া, চকবাজার, বাদুরতলা, আগ্রাবাদ বেপারি পাড়া, সুপারি পাড়া, বড় পুলসহ নগরীর বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার প্রায় ৩০টি সড়ক বর্জ্যযুক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেকে বাসা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে, নগরের অধিকাংশ নিম্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে এসব এলাকায় গত মঙ্গলবার রাত থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ নগরীর প্লাবিত এলাকার অধিকাংশ বিদ্যুৎ মিটার পানিতে ডুবে গেছে। অন্যদিকে, ১৪ উপজেলার অনেক স্থানে গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুটি উপড়িয়ে অনেক স্থানে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, অতিবর্ষণে নগরের অনেক নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠেছে। কোন কোন এলাকার মিটারও পানির নিচে চলে গেছে। তাছাড়া কোথাও কোথাও বৈদ্যুতিক তারও বিচ্ছিন্ন হয়ে পানির নিচে পড়েছে। এজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। পানি নামলে বিদুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
পানির ঢলে সেতুর ধস
ভারী বর্ষণের পানির স্রোতের ঢলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বেঙ্গুরা স্টেশনর কাছের বোয়ালখালী খালের ওপর ২৪ নম্বর রেলওয়ে সেতু ধসে পড়ে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেল যোগাযোগ। বুধবার সকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে দোহাজারী থেকে আসা যাত্রীবাহী ট্রেনটি পটিয়ার ধলঘাট স্টেশনে আটকা পড়ে। গোমদন্ডী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. জাফর বলেন, ২৪নং সেতুর মেরামতের কাজ চলছে। এই লেন দিয়ে প্রতিদিন একজোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ও দোহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ফার্নেস অয়েলবাহী ওয়াগনবাহী ট্রেন চলাচল করে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।