সাভারে গত বৃহস্পতিবার রাতে দুই তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে যে লিজেন্ড কলেজে সেই কলেজটি ডিবি অফিসের পাশেই। ডিবি অফিস থেকে তার দূরত্ব মাত্র ১৭ গজ। মাঝখানে মাত্র একটি ভবন। আর গণধর্ষণের মূল হোতা হিসেবে পুলিশ যাকে চিহ্নিত করেছে সেই লিটন মন্ডল পুলিশের দীর্ঘদিনের সোর্স হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ওই গণধর্ষণের ঘটনায় দাযের করা মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
সাভার মডেল থানার পুলিশ জানায়, মিউজিক ভিডিও’র মডেল ও নাটকে অভিনয় করার সুযোগ দেওয়ার দেওয়ার কথা বলেই পুলিশর সোর্স লিটন দুই তরুণীকে সাভারে নিয়ে এসেছিল। এরপর বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে সাভার পৌরসভার সোবহানবাগ এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের(ডিবি) পার্শ্ববর্তী লিজেন্ড কলেজের দোতলায় অফিস কক্ষে দুই তরুণীকে আটকে রেখা হয়। পরে দুই তরুণীকে লিটনসহ ওই ভবনেরই দুই নিরাপত্তাকর্মী মোকারম হোসেন ও মিজানুর রহমান মিজান ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় পুলিশ দুই নিরাপত্তাকর্মীকে গ্রেফতার করলেও ঘটনার মূল হোতা লিটনকে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও গ্রেফতার করতে পারেনি। গণধর্ষণের শিকার দুই নারীর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসার আগেই নিরাপত্তাকর্মীদের সহযোগিতায় কৌশলে পালিয়ে যায় সে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এলাকায় ডিবি’র সোর্স হিসেবে প্রভাব খাটিয়েই লিজেন্ড কলেজের ভেতরে প্রবেশ করে লিটন।
ঢাকা জেলা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের ওসি এ এস এম সায়েদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন , ‘অভিযুক্ত লিটন আগে ডিবি পুলিশের সোর্স ছিল। সে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। এক মাস আগে তাকে মাদক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে জামিনে বেরিয়ে আসে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও লিজেন্ড কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ থেকে চার বছর আগে সাভারের সোবহানবাগ এলাকায় কাজের সন্ধানে আসেন লিটন। এরপর থেকেই ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে থাকে। ঢাকা জেলা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের পাশে লিজেন্ড কলেজের ভবনের ৬তলায় ভাড়া থাকত সে। গত ৩০ জুন সে বাসা ছেড়ে দিয়ে কাছের আরেকটি বাসায় ওঠে। শুরুতে ডিবি’র এসআই জহিরুলের সোর্স হিসেবে কাজ করার কারণে পুলিশের অন্যান্য বিভাগের সদস্যদের কাছেও সে পরিচিত হয়ে ওঠে। এসআই জহিরুল বদলি হয়ে যাওয়ায় পর ঢাকা জেলা উত্তরের বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার সোর্স হিসেবে কাজ করে। এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসাও শুরু করে লিটন মন্ডল। দীর্ঘদিন যাবৎ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করার কারণে নামা বাজার, আড়া পাড়া, বেদে পল্লী, ডগর মোড়া, চাপাইন ও সোবহানবাগ, এলাকায় লিটনের বেশ প্রভাব আছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাসিনুল কাদির বাংলাদেশ প্রতিদিন বলেন, দুই তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় লিটন মন্ডলকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। লিটনকে গ্রেফতারে বিভিন্ন এলাকার অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান।
সাভার পৌরসভার সোবহানবাগ সাভার সিটি সেন্টারের পিছনের গলিতে প্রথমে লিজেন্ড কলেজ, তারপর একটি আবাসিক ভবন এবং সবার শেষে ঢাকা জেলা উত্তরের ডিবি অফিস। রাস্তাটি সেখানেই শেষ। লিজেন্ড কলেজের সামনে থেকেই ডিবি সদস্যদের আসা যাওয়া করতে হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে দুই তরুণীকে লিজেন্ড কলেজের অফিস কক্ষে আটকে রাখা হয়। আর তাদের চিৎকারে ভোররাতে আশে পাশের লোকজন তাদের গিয়ে উদ্ধার করে। তারপর এলাকার লোক খবর দিলে ডিবি’র সদস্যরা সেখানে যান সেই ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব