এরিন কে ফ্লেটলি পেডিয়াট্রিক অ্যাওয়ার্ড ২০১৭ ঘোষণা করেছে সেপসিস এলিয়েন্স। এ বছর এ অ্যাওয়ার্ডের জন্য তিনজন নার্সের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে আছেন দুজন আমেরিকান এবং একজন বাংলাদেশি। আর এই বাংলাদেশি হলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে কর্মরত নার্স মাহমুদা আক্তার।
সম্প্রতি আমেরিকায় এ বছর দু’টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমেরিকান এবং আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে আমেরিকান ক্যাটাগরিতে দু'জন এবং আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে একজন স্বীকৃত নার্সকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যারা শিশুদের মধ্যে সেপসিসের (সংক্রমণ) প্রাদুর্ভাব নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করে সফলতা অর্জন করেছেন। আমেরিকান ক্যাটাগরিতে বেথওয়াথেন, ওয়েন্ডিরেডফ্রেন এবং আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে এ পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন রামেক হাসপাতালের মাহমুদা আক্তার।
এ সফলতার অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহমুদা বলেন, ‘সম্প্রতি এরিন কে ফ্লেটলি পেডিয়াট্রিক সেপসিস অ্যাওয়ার্ড ২০১৭ ঘোষণা করেছে সেপসিস এলিয়েন্স। সেখানে আমার কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পুরস্কার জিতেছি-তাতে আমি গর্বিত। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম পুরস্কার পাওয়ার কথা জানতে পেরে। আন্তর্জাতিক এ অ্যাওয়ার্ড অর্জন আমাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, এ অ্যাওয়ার্ডের তালিকায় নাম আসার পর আমার সহকর্মী নার্স, চিকিৎসকরাও অনেক খুশি হয়েছেন। এ অ্যাওয়ার্ডের জন্য রামেক হাসপাতালের ‘আইসিইউ’ এর পক্ষ থেকে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিলো। সেখানে চিকিৎসকসহ প্রতিটা ওয়ার্ড ইনচার্জ, সিনিয়র নার্সরা উপস্থিত ছিলেন।’
মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমি সেপসিস সম্পর্কে প্রথম জেনেছি নার্সিং স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায়। আমার ক্লিনিক্যাল প্রাকটিসে আই.সি.ইউ, রামেক হাসপাতালে প্লেসমেন্ট হয়। তখন চিকিৎসক আবু হেনাকে দেখতাম ইনফেকশন কন্ট্রোলের ব্যাপারে খুবই জোরদার ভূমিকা রাখতেন। তিনি সবাইকে উৎসাহিত করতেন ইনফেকশন ও সেপসিস কন্ট্রোলের ব্যাপারে। সেখান থেকেই মূলত আমি আগ্রহী হয়েছিলাম ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ইনফেকশন ও সেপসিস কন্ট্রোল নিয়ে কাজ করব।’
মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘সেপসিস মোকাবেলা আমার একার পক্ষে সম্ভব না। যেহেতু এখানে সবার সমান ভূমিকা রাখা খুবই দরকার। কিন্তু আমি আমার সহকর্মীদের উৎসাহিত করেছি সেপসিস কন্ট্রোলের ব্যাপারে। রোগীর আত্মীয়দের উৎসাহিত করেছি তারা যেন তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করে। তাদের যা ভূমিকা রাখা দরকার বুঝিয়ে বলেছি এবং আমি মোটামুটি আশানুরূপ ফল পেয়েছি। যার কারণে আইসিইউ থেকে অনেক রোগী পুরোপুরি ভালো হয়ে তাদের পরিবারে ফিরে যেতে পারে। এইটা আমার এক বড় বিশেষত্ব বলে আমি মনে করি।’
এ কাজের জন্য অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে মাহমুদা আক্তার রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামালকে স্মরণ করেন। রাজশাহীর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মেয়েটির চাকরির বয়স মাত্র সাত মাসের মতো। কিন্তু এ সময়েই সে একজন প্রকৃত নার্সে পরিণত হয়েছে। তার দক্ষতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। আর তার স্বীকৃতিস্বরূপ সে গোটা বিশ্বের মধ্যে একজন হয়ে নার্সিংয়ের উপর এ পুরস্কার জিতেছে। এতে আমরাও গর্বিত।’
বিডি প্রতিদিন/২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হিমেল