চিকিৎসকের টেবিলে সাজানো হরেক রকমের ঔষধ। সামনেই রোগী নিয়ে অপেক্ষায় আছেন স্বজনেরা। দেয়া হচ্ছে নানান রোগের চিকিৎসা। পাঠক, এটি কোনো মানুষের চিকিৎসা সেবা নয়। অবলা প্রাণীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নেয় পরিবেশ ও প্রাণী বিষয়ক সংগঠন ইকো সেভার্স এলাইয়েন্স অব বাংলাদেশ (ইসাব)। সংগঠনটি এদিন রাজধানীর বনানী এলাকার পথ কুকুর-বিড়ালদের উন্নত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চিকিৎসা, টিকাদান ও জনসচেতনতার আয়োজন করে।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বনানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো কুকুরদের নানান স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে। এ সময় গুলশান, মহাখালীসহ আশপাশের এলাকা থেকে প্রাণীপ্রেমিরা পথের ও পালিত কুকুর-বিড়াল নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় স্থানীয়দের মাঝে কুকুর ভীতি কমাতে লিফলেট বিতরণ ও কুকুরের কামড় দিলে করণীয় সম্পর্কে অবগত করেন সংগঠনটির সদস্যরা। এমন অভিনব আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষও।
এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, দেশে প্রাণীদের সুরক্ষায় কারো নজর নেই। তাই সংগঠনটি সদস্যরা পথো কুকুর-বিড়ালের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওপর জোর দেয় ও সচেতনতা তৈরির কাজটি করছে।
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক এবং ইসাবের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকার মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কুকুরগুলো নানান ধরণের স্বাস্থ্যগত জটিলতায় আক্রান্ত। এর ফলে এসব প্রাণী অসুস্থ হলে তা সুস্থ প্রাণীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মনেও এসব প্রাণী নিয়ে ভীতি তৈরি হয়। তাই এই বোবা প্রাণীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার তাগিদে আমাদের এই উদ্যোগ। প্রাণীর প্রতি মানুষ যেন সহানুভূতিশীল হয়, প্রাণীদের ভালোবাসে সেই চেষ্টা সকলেই শুরু করবেন এই প্রত্যাশাই করছি।
মিঠু জানান, সংগঠনটি গত এক বছরে নানা কর্মসূচি অনানুষ্ঠানিকভাবে করলেও গত ৯ মার্চ রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় একশ কুকুরকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন প্রদান করে। এরপর অন্য একটি এলাকায় অর্ধশতাধিক কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা প্রদান করে। আগামীতে ইসাব প্রাণী সুরক্ষায় এমন আরো উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চিকিৎসা সেবাটি পরিচালনা করেন প্রাণী চিকিৎসক ডা. শারমিন আক্তার, ডিভিএম। তিনি বলেন, পালিত কুকুর-বিড়ালের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন অনুভব করেন সকলেই। কিন্তু পথে ঘুরে বেড়ানো প্রাণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি এখনো অবহেলিত দেশে। তিনি বলেন, পথের কুকুর-বিড়াল মূলত রাস্তা বা ডাস্টবিনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারণে পেটে সমস্যা, বহিঃপরজীবী ধারা আক্রান্ত হয়, শরীরের লোম/পশম ঝড়ে পড়া ও গাড়ি দুর্ঘটনা বা নিজেদের মারামারি করে আহত হয় বেশি। এছাড়া ক্রিমিতেও আক্রান্ত তারা বেশি। তাই আমরা আজ এমন প্রাণীই বেশি পেয়েছি। এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ইসাবের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদা খান বলেন, পথে-ঘাটে চলার পথে অনেক কুকুর বা বিড়ালকে দেখা যায় অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে। ওদেরও যে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে তা আমাদের দেশে এখনো তৈরি হয়নি। এমন কার্যক্রমের মাধ্যমে যদি অসুস্থ কুকুর-বিড়ালদের সুস্থ করা হয় তবে অন্য প্রাণীরা আক্রান্ত হবে না। আর সুস্থ প্রাণী কখনোই পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তিনি জানান, খুব শিগগিরই রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও কুকুর-বিড়ালদের চিকিৎসার আওতায় আনবে সংগঠনটি।
ইকো-সেভার্স এলাইয়েন্স অব বাংলাদেশ (ইসাব) মূলত সরকার, সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষসহ সর্বস্তরে প্রাণী সুরক্ষার কাজ করছে। যার মাধ্যমে প্রাণীদের নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাণীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে আইনগত অবস্থান নিশ্চিত করণে কাজ করছে।
বিডি-প্রতিদিন/৩১ মার্চ, ২০১৮/মাহবুব