এবার এক বন্ধুকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করেছে অপর দুই বন্ধু। অপরাধ শুধু টাকা ধার নেওয়া। সোমবার এমনই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে গ্রেফতারকৃত বন্ধুরূপী দুই খুনি। গাজীপুরের এক গহীন বনের ভেতর এ ঘটনা ঘটে। নিহতের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দুইদিন পর শালবনের ভেতর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের নাম রাসেল মোল্লা। তিনি রাজেন্দ্রপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতো। রাসেল শ্রীপুরের প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে। গ্রেফতারকৃত দুই বন্ধু ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলের বেলতৈল গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আল মামুন (১৯) ও একই এলাকার হেলিম উদ্দিনের ছেলে ইমাম হোসেন (২০)।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (ওসি) আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিহত রাসেল মোল্লা রাজেন্দ্রপুর এলাকার একটি কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতো। আর একই কারখানায় সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো মামুন ও ইমাম। একই কারখানায় কাজের সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে রাসেল মোল্লা মামুনের নিকট থেকে ২৫ হাজার টাকা ধার নেয়। রাসেল এলাকার হওয়ায় মামুনকে পাত্তাই দিতো না। পাওনা টাকা চাইলেও দেই-দিচ্ছি বলে তালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে মামুন ও ইমাম কারখানার কাজ ছেড়ে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে থাকে।
পরে গত মাসের ৮ তারিখ বিকেলে মামুন টাকা লাগবে না বলে নিহত রাসেল মোল্লাকে রাজেন্দ্রপুর বাজারে আসতে বলে। কথামতো রাসেল ওইদিন সন্ধ্যায় দেখা করতে রাজেন্দ্রপুর বাজারে। কিন্তু এরই মধ্যে মামুন ও ইমাম পরিকল্পনা আটে রাসেলকে মেরে ফেলার। আর যেই কথা সেই কাজ। দু’জনে মিলে রাজেন্দ্রপুর বাজার থেকে একটি হাতুড়ি কেনে। পরে সন্ধ্যার দিকে রাসেল আসলে তাকে বলে টাকা লাগবে না। এক পর্যায়ে মামুন ও ইমাম বলে চল তোর বাড়িতে যাবো। এ সময় তিন বন্ধু রাজেন্দ্রপুর রেলষ্টেশন হতে রেললাইন যোগে হেঁটে রাসেল মোল্লার বাড়ি যেতে থাকে। পথিমধ্যে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় মামুন ও ইমাম মিলে রাসেলকে বনের ঝোঁপের ভেতর নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে কপালে, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের উপর্যপুরী আঘাত করতে থাকে। এতে রাসেল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইমাম পড়নের প্যান্টের বেল্ট খুলে গলায় বেধে জোড়ে টান দেয়। রাসেলের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রাসেলের সাথে থাকা একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে তারা রাসেলের মোবাইল অন্যত্র বিক্রয় করে দেয়। মোবাইল বিক্রয়ের টাকা ও নগদ পাওয়া ৭ হাজার টাকা দু’জনে সমহারে ভাগ করে নেয়।
বনের ভেতর থেকে রাসেলের মৃতদেহ উদ্ধারের পর রাসেলের মা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা রুজু হওয়ার পরপরই হত্যা রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গত রবিবার দুপুরে শ্রীপুরের রাজেন্দ্রপুর বাজার থেকে প্রথমে আল মামুন (১৯) ও পরে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী ইমামন হোসেনকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মামুন ও ইমাম হত্যার কথা স্বীকার করে এর বর্ণনা দিয়েছে বলে জানায় শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (ওসি) আসাদুজ্জামান। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত হাতুড়িও উদ্ধার করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল