নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাসদাইরের স্কুলছাত্র আরাফাত রহমান সিয়াম আহমেদ (১০) হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার রায়ে ৬ আসামির মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অপর ৩ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৭ বছর করে কারাদণ্ড অনাদায়ে আরও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মাসদাইর এলাকার ফারুক মন্ডলের ছেলে মেহেদী মন্ডল, মাসদাইরের আরমান মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল মতিনের ছেলে ভ্যানচালক আসলাম ও শ্রমিক হালিম। এদিকে, খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- মাসদাইর এলাকার ফারুক মন্ডল, স্ত্রী মেরিনা মন্ডল, বিপ্লব। রায় ঘোষণার সময়ে আসলাম ছাড়া বাকি সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেছেন।
এদিকে, রায়ের প্রেক্ষিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত সিয়ামের বাবা মোস্তফা মাতবর। তিনি রায় ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি রায়ে সন্তুষ্ট না। উচ্চ আদালতে আপিল করবো। এভাবে আমার ছেলেকে মারলো অথচ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলো না।’
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কবুতর কেনার টাকা না দেয়ায় ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর মাসদাইরে আদর্শ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত হোসেন সিয়ামকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে মেহেদী মন্ডল। হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুমে সহযোগিতা করে ঘাতক মেহেদী মন্ডলের বাবা ফারুক মন্ডল ও তার মা মেরিনা মন্ডল। এরপর ২৩ নভেম্বর সিয়ামের বস্তাবন্দী লাশ মুন্সিগঞ্জের শান্তিনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- মাসদাইর পাকাপুল এলাকার মেহেদী মন্ডল, তার বাবা ফারুক মন্ডল, মা মেরিনা মন্ডল, মাসদাইরের আরমান মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল মতিনের ছেলে ভ্যানচালক আসলাম, শ্রমিক হালিম ও বিপ্লব। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছিলেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর সিয়ামকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেয়ার পরে মেহেদী তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে সিয়ামের বুকে আঘাত করলে সিয়াম চিৎকার করার চেষ্টা করে। এসময় মেহেদীর মা মেরিনা মন্ডল সিয়ামের মুখ এক হাতে চাপা দিয়ে রেখে অপর হাতে মোবাইলে তার স্বামী ফারুক মন্ডলকে ফোন করে ঘটনাটি জানায়। তখন ফারুক মন্ডল মাসদাইর কবরস্থান সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বের ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছিল। স্ত্রী মেরিনা মন্ডলের ফোন পেয়েই ফারুক মন্ডল তৎক্ষণাৎ বাড়িতে ফিরলে তার সামনেই আবার সিয়ামের বুকে চাকু দিয়ে আঘাত করে মেহেদী। তখন ফারুক মন্ডল ও মেরিনা মন্ডল ছেলে মেহেদীকে বাধা না দিয়ে এবং ছুরিকাহত সিয়ামকে হাসপাতালে না নিয়ে ফারুক মন্ডল সিয়ামের মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গলা চেপে ধরে এবং তার পরিহিত লুঙ্গি দ্বারা সিয়ামের ক্ষতস্থানে চেপে ধরে রক্ত থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সিয়াম মৃত্যুবরণ করে। পরে মেরিনা বেগমের পরামর্শে মেহেদীর বাবা ফারুক মন্ডলের লুঙ্গী দিয়ে পেচিয়ে আমের ঝুড়িতে ভরে বস্তাবন্দী করে লাশ আসলামের ভ্যান গাড়িতে করে মুন্সীগঞ্জের মোক্তারপুরে শান্তিনগর এলাকাতে নিয়ে ফেলে দেয়া হয়। মেহেদী মন্ডলের পরিকল্পনায় এ কিলিং মিশনে থাকা হালিম বিপ্লব ও আসলামকে ভাড়া করা হয় ১২ হাজার টাকায়।
পরে গ্রেফতার ভ্যানচালক আসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের বর্ণনা দেন। এরপর গ্রেফতার মেহেদী মন্ডলও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম