মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য বিদ্যমান আইনের ২ বছরের কারাদন্ডের শাস্তি এক বছরের কমিয়ে এনে সংসদে পাস হয়েছে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০১৮’। তবে বিলে কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া
শ্রমিকদের জন্য উৎসব ভাতা, নারী শ্রমিকদের প্রসূতি ছুটি, বিরোধ মিমাংসায় মালিক-শ্রমিক-সরকারের ত্রিপক্ষীয় পরিষদ গঠন, ছয় মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি, ২৫ জন শ্রমিক হলে কারখানায় খাবার কক্ষের বিধান রাখা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২৩তম অধিবেশনের আজকের বৈঠকে কন্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। এরআগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। গত ২১ অক্টোবর বিলটি উত্থাপিত হয়। বিলটি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ২৩ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদে বিলের প্রতিবেদন পেশ করে।
সংশোধিত আইনে কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকরা মারা গেলে এক লাখ টাকার বদলে দুই লাখ টাকা এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে সোয়া এক লাখ টাকা পরিবর্তে আড়াই লাখ টাকা পাবেন। কোন মালিক কোন নারী শ্রমিককে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করলে তিনি ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আগে এ ধরনের কোন শাস্তি ছিল না। এছাড়া বিদ্যমান আইনে শর্ত সাপেক্ষে শিশু শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করার বিধান আছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৪-১৮ বছর বয়সী কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। তবে কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া বে-আইনী ধর্মঘট ডাকার দণ্ড এক বছর থেকে কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। জরিমানা আগের মতোই ৫ হাজার টাকা বহাল রয়েছে। কোন ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে কারাদণ্ডের বিধান ৬ মাস থেকে কমিয়ে এক মাস করা হয়েছে।
সংশোধিত শ্রম বিলে মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড করা হয়েছে। আগে শাস্তি ছিল ২ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আইনে অসদাচরনের সজ্ঞায় বলা হয়েছে, বল প্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, কোন স্থানে আটক বা উচ্ছেদ শারীরিক আঘাত এবং পানি, বিদ্যুত, গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অথবা অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করে মালিককে বিরোধ নিষ্পত্তিনামায় দস্তখত করতে বা কোন দাবি গ্রহণ বা মেনে নিতে বাধ্য করতে চেষ্টা করতে পারবেন না শ্রমিকরা। করলে এটা অসদাচরণ হবে। অন্যদিকে কোন মালিক শ্রমিকের চাকরির চুক্তিতে ট্রেড ইউনিয়নে যোগদান নিষেধাজ্ঞা, কোন ট্রেড ইউনিয়নে এর সদস্য পদ চালু রাখার অধিকারের ওপর কোন বাধা সম্বলিত কোন শর্ত আরোপ করতে পারবেন না। করলে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া আইনে প্রধান পরিদর্শকের পদটি মহাপরিদর্শকসহ আরও কিছু পদের নামে পরিবর্তন ও নতুন কিছু পদ যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত বিলে। তবে এই বিলটি ইপিজেড এলাকার কারখানার জন্য প্রযোজ্য নয়।
বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের পূর্ব মেয়াদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির আলোকে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’ সংশোধন করা হয়। বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কর্মস্থলে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি সুরক্ষা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ, শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষা এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পূরণের লক্ষ্যে উক্ত আইন পুনরায় সংশোধন করার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বিল পাস
আজকের সংসদে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বিল ২০১৮ কন্ঠভোটে পাস হয়। বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ রহিত করে আইনের বিধানাবলি বিবেচনা ক্রমে সময়ের চাহিদার আলোকে আইনটি প্রণীত হয়। এরআগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে জারিকৃত উক্ত অধ্যাদেশ অকার্যকর হয়ে গেলে আবশ্যিকতা বিবেচনায় ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশ বলে আইনটি কার্যকর রাখা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন