বরিশাল নগরীর হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক এনামুল হক নিজামী নাসিমের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে ওই স্কুলের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে সোমবার দুপুরে তাকে আটক করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও অভিযুক্তের বিচার চেয়েছেন। চাপের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করেছে।
এদিকে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং ফৌজদারী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
নগরীর হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক এনামুল হক নিজামী নাসিম গোঁড়াচাঁদ দাস রোডের কালভার্ট সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাসার নিচতলায় গত কয়েক মাস ধরে ওই স্কুলের ছাত্রীদের কোচিং করিয়ে আসছেন। গত বুধবার কোচিং শেষ হলে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আরও পড়ানোর অজুহাতে কৌশলে কোচিং সেন্টারে রেখে অন্য ছাত্রীদের ছেড়ে দেন। পরে তিনি ওই ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এ সময় ওই ছাত্রী কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে ছেড়ে দেন শিক্ষক নাসিম।
শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েক দিন আগে নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়ার কথা বলে এক শিক্ষার্থীকে বিকেলে কোচিং সেন্টারে ডাকেন নাসিম। ওই ছাত্রী কোচিংয়ে গিয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের না দেখে ভয় পান। এরপর নাসিম তাকে কু-প্রস্তাব দেয়। রাজি না হলে প্রমোশন দেওয়া হবে না বলে তাকে জানিয়ে দেয় সে।
ছাত্রীরা জানান, শিক্ষক নাসিম সম্প্রতি একাধিক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে। তিনি প্রায়ই অশ্লীল এবং কু-প্রস্তাব দেন ছাত্রীদের। তিনি কথায় কথায় শাসনের ভঙ্গিতে উঠতি বয়সের মেয়েদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এ ঘটনা বিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রীরা জানতে পেরে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেন। তারা কাগজে ‘নাসিম স্যার থেকে সাবধান’ শ্লোগান লিখে দেয়ালে সাঁটিয়ে দেন। পরে শিক্ষক নাসিম নিজেই ওই শ্লোগান সংবলিত কাগজ উঠিয়ে ফেলেন।
অভিভাবকরা জানান, শিক্ষকের হাতে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি হলে ওই স্কুলে কোনভাবেই সন্তানরা নিরাপদ নয়। তাই অভিযুক্ত শিক্ষকের কঠোর বিচার চেয়েছেন তারা।
হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম ফকরুজ্জামান জানান, মেয়েরা তার কাছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ করেছিলো। মেয়ে ঘটিত বিষয় হওয়ায় তিনি ওই ছাত্রীদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিক নাজমা বেগমের কাছে ছাত্রীদের অভিযোগ করতে বলেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম জানান, মেয়েরা তার কাছে শিক্ষক নাসিমের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে যৌন নীপিড়নের অভিযোগ করেছিলো। তিনি শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছিলেন, কিন্তু এর মধ্যে স্কুল রোজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।
এরই মধ্যে বিষয়টি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ায় অভিযুক্ত শিক্ষক নাসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার কথা জানান প্রধান শিক্ষক ফকরুজ্জামান।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ১৬ ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারেফ আলী খান বাদশাহ জানান, তার মেয়েও এই স্কুলে পড়ে। এই স্কুলের সব মেয়েই তার মেয়ে। তাই তিনি অভিযুক্ত শিক্ষককের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। হালিমা খাতুন স্কুলের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি এবং এ ঘটনায় স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ নগরীময় ছড়িয়ে পড়ায় সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষক নাসিমকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম।
অপরদিকে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারী ব্যবস্থাও নেওয়ার কথা বলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক এনামুল হক নাসিম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার কোচিংয়ে ছাত্রীরা সাফল্য পাচ্ছে। এতে অন্যান্য শিক্ষকদের কোচিং বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তাই তাকে দমাতে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেন নাসিম।
১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল