পাশের গাড়ির চাপায় নিজের ডান হাত হারিয়েছেন বাসযাত্রী রাজশাহী কলেজের ছাত্র ফিরোজ সরদার (২৫)। ফিরোজ জানেন না, তার বাসের পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়িটি কোনো বাস নাকি ট্রাক। ওভারটেকিং নাকি ক্রসিং কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটিও তিনি জানেন না। তবে দুই চালকের দোষে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেই ফিরোজ মনে করেন। তাই তিনি শাস্তি চান দোষি দুই চালকের।
ঘটনার পর বাসটি ফিরোজকে রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী পর্যন্ত নিয়ে আসে। বাসেই ছিলেন ফিরোজের একজন সহপাঠী ও দূর সম্পর্কের এক নানা। তারা ফিরোজকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে কাটা হাত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় কাটাখালী থানার পুলিশ।
কিন্তু চিকিৎসক জানান, এই হাত আর কাজে লাগবে না। পরে রাতেই অপারেশন থিয়েটারে ফিরোজের কেটে যাওয়া হাত পরিস্কারের পর সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়। এরপর তাকে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউতে) রাখা হয়। রাত ২টার দিকে ফিরোজের জ্ঞান ফেরে। পরে সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। সেখানেই সকালে তার সঙ্গে কথা হয়।
ফিরোজ বলেন, তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রামে বাসে চড়েন। আসার পথে নাটোর পর্যন্ত বাসটি অনেক জায়গায় থেমেছে আর দেরি করেছে। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদর পার হওয়ার পর বাসের গতি বাড়তে থাকে। পুঠিয়ার বেলপুকুর থেকে খুবই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। দুটি গাড়ির চালকের দোষে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই দুই চালকের শাস্তি চান তিনি।
ফিরোজ জানান, তিনি বাসের একেবারে শেষের সিটে বসেছিলেন। ডান হাত দিয়ে তিনি জানালার ভেতর দিয়েই সামনের সিট ধরে ছিলেন। হঠাৎ একটা ঝাকুনিতে তার হাত সিট থেকে আলাদা হয়ে জানালার বাইরে চলে যায়। তখনই বিকট শব্দে পাশের গাড়ির সঙ্গে বাসটি ধাক্কা খায়। এতে চাপা পড়ে তার হাত কেটে পড়ে যায়। হাত কেটে যাওয়ার পরও হাসপাতাল আসা পর্যন্ত তার জ্ঞান ছিল। কিন্তু যে গাড়ির সঙ্গে চাপা লেগে তার হাত বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেটি তিনি চিনতে পারেননি।
তবে যে গাড়িতে তিনি আসছিলেন সেটির ইংরেজিতে নামের প্রথম দুই অক্ষর ‘এম, ও’ তার মনে আছে। এছাড়া গাড়িতে ওঠার সময় খেয়াল করেছিলেন গাড়ির সামনের কাঁচ ছিল ফাটা। আর গাড়ির দরজার সঙ্গে যে জানালা থাকে তার একটিতে কোনো কাঁচ ছিল না।
ফিরোজ জানান, নন্দীগ্রামে বাসে ওঠার সময় চেইন মাস্টার তাকে জানিয়েছিলেন, গাড়িটি বগুড়া থেকে আসছিল।
রাজশাহীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালের বগুড়া কাউন্টারে গিয়ে জানা গেছে, বেলা ১১টার পর রংপুরের কোনো গাড়ি রাজশাহী আসে না। কিন্তু বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রংপুর থেকে রাজশাহীর মালিকদের গাড়ি ছেড়ে আসে।
শুক্রবার রাজশাহী থেকে ‘শ্রাবন্তি’, দিবারাত্রি’, ‘সেতু’, ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘মহানগর’ নামের পাঁচটি বাস রংপুর গিয়ে ফেরত এসেছে। এর মধ্যে নামের প্রথম দুই অক্ষর ‘এম এবং ও’ শুধু মহানগর গাড়ির। তাই যে বাসে ফিরোজ আসছিলেন সেটি মহানগর হতে পারে।
এ বিষয়ে কথা বলতে মহানগর গাড়ির মালিক কিংবা চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুনজুর রহমান পিটার বলেছেন, মহানগর নামে কয়েকজন মালিকের গাড়ি চলাচল করে। কার গাড়িটি শুক্রবার রংপুর গিয়েছিল সেটা বলা মুশকিল।
বাস চালকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন : রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী ফিরোজ সরদারের হাত বিচ্ছিন্নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর ১২ টায় রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান।
এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানায়। সেই সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর সু-চিকিৎসার দাবি জানানো হয়।
কাটাখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, দুর্ঘটনার পর রাতেই তিনি থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (ডিডি) করেছিলেন। এখন ফিরোজের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলা হলে দোষী চালকদের গ্রেফতার করা হবে।
ওসি বলেন, ফিরোজ কোন গাড়ির যাত্রী ছিলেন এবং কোন গাড়ির সঙ্গে চাপা লেগেছে তা তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। পাশের গাড়িটি বাস ছিল নাকি ট্রাক সেটাও কেউ জানাতে পারেননি। তবে সব বিষয় নিশ্চিত হতে পুলিশ কাজ করছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন