জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি নেতারা। কাউন্সিলের প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ও আদালতের আদেশের কারণে নতুনভাবে কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু করেছে ছাত্রদলই। এক্ষেত্রে বিএনপি শুধু অভিভাকের ভূমিকায় থাকবে।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপিতে ছিলেন তারেক রহমান। বৈঠকের পর রাতেই ফোন করে সারাদেশের ছাত্রদল কাউন্সিলদের ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে ছাত্রদলের কাউন্সিলররা বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করার কথা রয়েছে।
ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গত ৯ জুন সংগঠনটির সাবেক ১৬ নেতাদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা, বাছাই ও আপিল কমিটি গঠন করা হয়। নেতারা সরে দাড়ানোর কারণে এসব কমিটির কার্যক্রমও আর থাকছে না।জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলররা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে আমরা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছি না। ছাত্রদলই তাদের কাউন্সিল করবে। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই।
সূত্র জানায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর বিএনপি প্রমাণ করত চাইছে তাদের এই কাউন্সিলের সঙ্গে সরাসরি সম্পক্ততা নেই। দলের অন্যতম সহযাগী সংগঠনের দেখভালের কাজটিই শুধুই তারা করছেন।
সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে-
এদিকে, যে কোনো সাংগঠনিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর প্রদান করেছে ছাত্রদল। এখন থেকে ছাত্রদল গঠন ও পুনর্গঠনসহ গঠনতন্ত্র সংশোধন, কাউন্সিল আহ্বান, কাউন্সিল মূলতবী, নেতৃত্ব নির্ধারণে নির্বাচন পরিচালনা করার বিষয়ে তাকে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিল সভার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দুপুর ১ টা থেকে এক ঘন্টার এই বৈঠকে সারাদেশ থেকে আসা ছাত্রদলের ৩ শতাধিক কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সভাপতি খন্দকার এনামুল হক।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন কিংবা তার অনুপস্থিতিতে অনুরূপ দায়িত্ব পালনরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব সভায় উত্থাপন করেন একজন কাউন্সিলর। সঙ্গে সঙ্গে সে প্রস্তাবে সবাই সমর্থন করেন। পরে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের সংশোধন, কাউন্সিল আহ্বান, কাউন্সিল মূলতবী করা, নেতৃত্ব নির্ধারণে নির্বাচন পরিচালনা করাসহ যে কোনো সাংগঠনিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে প্রস্তাব করেন কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রাজ। তার এ প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন জানান কাউন্সিলরা। সভায় ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান কাউন্সিলরা।
সভার বিষয়ে রাতে গণমাধ্যমে পাঠনো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ছাত্রদলের কাউন্সিল সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাকে কারারুদ্ধ করার নিন্দা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মিথ্যা সাজানো মামলায় বিচারের নামে তার প্রতি যে অবিচার চালানো হচ্ছে তারও নিন্দা করে অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করেছে। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্য যেসব মিথ্যা মামলা করা হয়েছে তার নিন্দা এবং সকল মামলা তুলে নেয়ার জোর দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও বিবৃতিতে জানানো হয়, সভায় শিক্ষাখাতসহ সকল খাতে যে মেগা দুর্নীতি হয়েছে- এ ব্যপারে বিচার বিভাগের নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি তদন্তের আয়োজন জরুরী বলে মনে করছে এবং লুটেরাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
সভা সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সভাপতি খন্দকার এনামুল হক বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার অনুপস্থিতিতে এখন আমাদের অভিভাবক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার ওপর কাউন্সিল সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা অর্পন করা হয়েছে। এখন তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মানবো। তার নির্দেশনা মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবো। বৈঠক আজকের (মঙ্গলবার) মতো মূলতবি করা হয়েছে। বৈঠকে তিন শতাধিক কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান ছাত্রদলের এই নেতা।
বিএনপি আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী ছাত্রদলের কাউন্সিলে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। ছাত্রদল নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তারা ইচ্ছে করলে কাউন্সিল করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আইনী কোন বাধা নেই।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ১০ নেতাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আমরা যথা সময়ে আদালতে জবাব দেবো।
নির্বাচন পরিচালনায় ‘প্রস্তুতি কমিটি’ হচ্ছে-
এদিকে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পরিচালনায় ‘প্রস্তুতি কমিটি’ গঠন করা হচ্ছে। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সিনিয়র কয়েকজন ও ঢাকা মহানগরের সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘প্রস্তুতি কমিটি’ করা হবে। ছাত্রদলের মধ্যে থেকে এ কমিটি গঠন করা হলে সেক্ষেত্রে আইনীভাবে কোন সমস্যায়ও পড়তে হবে না এমনটাই মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামি সপ্তাহের যে কোন দিন কাউন্সিল হতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ