রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীকে থানায় আটকে দেড় কোটি টাকার চেক নেয়ার অভিযোগে এবার কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার সেই পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ রবিবার কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার দ্বিতীয় আসামি হলেন নগরীর মনোহরপুর উজির দিঘির পাড় এলাকার মৃত রতন মিয়ার ছেলে মেসার্স এম আলমের মালিক মো. মাহাবুব আলম (৫২)। কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর সদর হাসপাতাল রোড এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মো. মহিউদ্দিন (৫২) বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতের বিচারক জালাল উদ্দিন মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সালাউদ্দিন মাহমুদ।
বাদী মহিউদ্দিনের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টার দেখিয়ে বাদী মহিউদ্দিনের জমি বন্ধক রেখে চাচাতো ভাই মামলার দ্বিতীয় আসামি মাহাবুব আলম ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। সময় মত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় অর্থ ঋণ আদালতে মাহাবুবের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক। ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করার পর থেকে আসামি মাহাবুব মহিউদ্দিনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন এবং আসামি মাহাবুব আলম যোগসাজসে টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ৩ আগস্ট রাত ১০টার সময় ৩/৪ জন পুলিশ সদস্য এবং মাহাবুব নগরীর হোটেল সালাউদ্দিনের ক্যাশে বসা অবস্থা থেকে মহিউদ্দিনকে থানায় তুলে নিয়ে যায়।
থানায় নিয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিনের তার রুমে আটক রাখে। বাড়ি থেকে চেক বই নেওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন এবং মাহাবুব বাদী মহিউদ্দিনকে চাপ দেয়। চেক বই না দিলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখায়। পরবর্তীতে মহিউদ্দিন বাড়ি থেকে ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে থানায় চেক বই নেওয়ার পর ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে হুমকি দেয় পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন ও চাচাতো ভাই মাহবুব। হুমকির মুখে পড়ে শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক লি. এর হিসাব নং- ০০১১১০০০০০০৩৫, চেক নং- ০০০০০২২ চেক বইয়ের একটি চেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা লিখতে বাধ্য হয়। এরপর পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন নিজ হাতে চেকটি গ্রহণ করেন। এছাড়া সাদা কাগজে মহিউদ্দিন এবং উপস্থিত কয়েকজন ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়।
ভুুক্তভোগী মহিউদ্দিন বলেন, থানায় তুলে নিয়ে দেড় কোটি টাকার চেক মাহাবুবের জন্য আদায় করতে পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন আমাকে হুমকি, মিথ্যা মামলার ভয় এবং নানা চাপ প্রয়োগ করেছেন। আইন অনুসারে কোন পুলিশ কর্মকর্তা তা করতে পারেন না। ঘটনার পর জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর আমি অভিযোগ করে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন জানান, চেকের সমস্যা বাদীর চাচাতো ভাই মাহাবুবের সাথে। এখানে আমি জড়িত নয়। মামলার বিষয়ে এখনও আমি আদালত থেকে কোন কাগজপত্র পাইনি।
মামলার দ্বিতীয় আসামি মাহাবুব আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তার প্রথম স্ত্রী সামসুন নাহার সুইটি গত ২৮ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মামলায় তার পরকীয়াসহ তিনটি বিয়ের কথা উল্লেখ করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক