করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মিত দেশের বৃহত্তম অস্থায়ী হাসপাতালটিতে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা থাকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফায়ার ফাইটিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডাক্তার ও নার্সদের জীবণুমুক্ত করার ব্যবস্থাসহ সব ধরনের আধুনিক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকছে এখানে। হাসপাতালটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার এর জন্য আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার কথা। এটা পেলেই বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। এরপর উদ্বোধন করে চিকিৎসা সেবা শুরুর অপেক্ষা। আজ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
উল্লেখ্য, কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে ততদিন বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
মাসুদুল আলম বলেন, আশপাশের কোনো দেশে এতো দ্রুত এতো বড় আধুনিক সুবিধা সম্বলিত হাসপাতাল হয়নি। আমরা রাত-দিন কাজ করেছি। এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত। ব্যয়বহুল হওয়ার পরেও এখানে ৭১ বেডের আইসিইউ হচ্ছে। তবে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় এতদিন কাজ শুরু করা হয়নি। এখন এক সপ্তাহের মধ্যে করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি। আইসিইউ বাদে দুই হাজার ১৩ বেডের হাসপাতাল আমাদের প্রস্তুত। এখানে রোগী, ডাক্তার, নার্সদের হাসপাতালে ঢোকা এবং বের হওয়ার জন্য আলাদা রাস্তা আছে। এখন হাসপাতালের জন্য পৃথক বিদ্যুৎ সংযোগের অপেক্ষায়। ইতোমধ্যে লাইসেন্স বোর্ডের অনুমতি মিলেছে। জেনারেটর বসে গেছে। আগামীকাল শুক্রবার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হতে পারে। সংযোগ পেলে হাসপাতালের ভেতর বিদ্যুৎ-সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।
এদিকে আইসিসিবিতে নির্মিত হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসক ও নার্সের চেম্বারগুলোর কাজ শেষ। বেডগুলোতে বেডসিট, ডাস্টবিন, স্যালাইন হ্যাঙ্গারসহ আনুষঙ্গিক সার্পোট বসানো হয়েছে। টয়লেট নির্মাণও শেষ। হাসপাতালের এসি, চেয়ারসহ অন্যান্য কাজের ফিনিশিংও একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে।
তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে হবে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)।
উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত