বুধবার মধ্য রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতে নারায়ণগঞ্জে শহর শহররতলীর ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ডিএনডি নীচু এলাকায় কোথাও কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া মূল শহর চাষাঢ়া এলাকার রাস্তায় হাঁটু জল ছুঁই ছুঁই। শহরতলী বিভিন্ন বাসা বাড়িতে প্রবেশ করেছে জলাবদ্ধতার পানি।
এদিকে ডিএনডির জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ভরসা সিদ্ধিরগঞ্জ ডিএনডি সেচ পাম্প হাউস। সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৩২০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন। কিন্ত ক্ষমতা আছে মাত্র ৪শ কিউসেক। সামর্থ্য বাড়াতে ৫ টি পাম্প নির্মাণ কাজ ঝুলে আছে আরও ৪ বছর ধরে। এ কারণে প্রতি বছরে অন্তত দুই থেকে তিন বার কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে ডিএনডিতে। এছাড়া জলাবদ্ধতার নেপথ্যে আরো রয়েছে স্থানীয়দের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে খাল দখল ও পানি নিষ্কাশনে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার নানা অভিযোগ।
সরেজমিন ডিএনডির জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতি পরিদর্শনে ফতুল্লার ইসদাইর গাবতলী, লালপুর সস্তাপুর, জালকুড়ি, পঞ্চবটি, কুতুরপুর , দেলপাড়া এলাকার গিয়ে দেখা যায়, বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বৃষ্টিতে ডিএনডি উচু এলাকায় কোথাও দুই থেকে তিন ফুট আর নীচু এলাকায় কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ির আঙ্গিনা তলিয়ে কোন কোন নীচু এলাকার ঘরে এখন হাঁটুজল। খাটের ওপর বসে দিন কাটছে সাধারণ মানুুষের।
এ বিষয়ে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকার বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, এ অবস্থা জন্য কারা দায়ী। ঘুরে দেখে আসুন। আমাদের ডিএনডিতে পানি নিষ্কাশনের যে মহল্লাভিত্তিক উপ-খালগুলো ছিল তা স্থানীয়রা বাড়িতে যাতায়তের জন্য মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করে ১৫-২০ ফুটের খাল ৪ ফুট ড্রেনে রূপান্তর করে রেখেছে। আর মাটি ও বালুর নীচে ছোট্ট একটি পাইপ স্থাপন করে রেখেছে বিশাল খালের ওপর দিয়ে যাওয়া পাড়া মহল্লার পানি নিষ্কাশনের জন্য।
শহরের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার ১৩ নং ওয়ার্ড বাসিন্দা শরীফ ইবনে হোসেন টুটুল সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেবুতে জলাবদ্ধতার বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়া ছবি আপলোড দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন, উন্নয়নের নমুনা শহর এখন যমুনা। সেখানে দেখা যায়, পুরো বাড়ির ভেতর জলাবদ্ধতার পানি প্রবেশ করেছে।
অন্যদিকে জলাবদ্ধতার এ সমস্যা সমাধনের একমাত্র ভরসা বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ সেচ পাম্প হাউস। সেখানকার সক্ষমতা জানতে গিয়ে ডিএনডি পাম্প হাউসের উপ সহকারি প্রকৌশলী রাম প্রসাদ বাছার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রায় ৬০ বছর পূর্বের ১২৮ কিউসেট ক্ষমতা সম্পন্ন ৪ টি ও অস্থায়ী ২ টি পাম্পসহ ছোট ছোট কিছু পাম্প রয়েছে। বৃহৎ ৪ টির মধ্যে ৩ টি সচল রয়েছে। ১ টি ব্রেক ডাউনে আছে। এগুলো পাওয়ার ৫১২ কিউসেক। কিন্তু মেশিন ৪ টি বয়স ৬০ হওয়ায় এখন ৪০০ কিউসেক সাপোর্ট দিতে পারছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী কিছু পাম্প চালু রেখেছে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে পানি লেয়ার আছে ৩.৫০। আগামী ১০ দিন বৃষ্টি না হলে পুরো জলাবদ্ধতা পানি নিষ্কাশিত হবে। তবে ১ দিন বৃষ্টি হলেই সেই পানি ডেলেভারী বা নিষ্কাশন করতে ১০ দিন সময় লেগে যায়।
তিনি জানান, ৭ বছর আগে বিশেষজ্ঞ দল জরিপ করে দেখেছে ডিএনডিতে প্রতি সেকেন্ডে ৩২০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশনের দরকার সেখানে প্রতি সেকেন্ডে হচ্ছে মাত্র ৪০০ কিউসেক। তাই সামর্থ্য বাড়াতে সেই জরিপের ভিত্তিতে ৩-৪ বছর পূর্বে আরো ৫ টি পাম্প হাউস নির্মাণের ওয়ার্ক অর্ডার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দেয়া হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তো আপনারাই বলেন সময় তো লাগবেই ডিএনডির পানি নিষ্কাশন হতে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল