তিন কারণে বারবার ডুবছে বরিশাল নগরী। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন দুই বেলা করে ডুবেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা। উজানের বন্যার পানির চাপ, অমাবশ্যার জো’র প্রভাব এবং অব্যাহত বৃষ্টির কারণে এখনও জলাবদ্ধ নগরীর বিভিন্ন এলাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, খাল-ড্রেনগুলো সংকুচিত হয়ে ধারন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা এবং কীর্তনখোলা বেষ্টিত নগরীতে শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় নদীর পানি উপচে প্রবেশ করছে লোকালয়ে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য খাল-ড্রেনগুলো সংস্কার এবং নাগরিকবৃন্দকে সচেতন হাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে, গত ২০ বছরের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কীর্তনখোলা নদীর পানি সর্বোচ্চ লেভেল (২.৫৫ সেন্টিমিটার) অতিক্রম করে ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত শুক্রবার সকাল ৯টায় কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সকাল ৮টায় বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং বিকেল ৫টায় ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দক্ষিনাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ জানান, বরিশাল বিভাগের ১২৫টি নদীর মধ্যে ১৫টি নদীর ১৭টি পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করে উন্নয়ন বোর্ড। এবার ১৫টি নদীর ১৭টি পয়েন্টে পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ লেভেল অতিক্রম করে।
পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, ২০ আগস্ট গত ২০ বছরের মধ্যে পানির লেভেল ছিলো সর্বোচ্চ। ২১ আগস্ট থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। আজ ২২ আগস্ট বিপৎসীমার উপরে থাকলেও পানি কমছে। এই জো’তে আর পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে উজানের বন্যার পানির চাপ, অমাবশ্যার জো’র প্রভাব এবং অব্যাহত বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি উপচে লোকালয় সহ বির্স্তির্ন এলাকা তলিয়ে যায়। বিশেষ করে নগরীর বেশীরভাগ এলাকা তলিয়ে চরম জনদুর্ভোগের সৃস্টি হয়। টানা ৫দিন দুই বেলা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে নগরী সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বির্স্তির্ন এলাকা ফসলি জমি, মাছের ঘের, বাজারঘাট সর্বত্র তলিয়ে যায়।
নদী-খাল বাচাঁও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, বরিশাল নগরীতে প্রবাহমান খাল ছিল ২২টি। পুকুর ছিল প্রায় ১০ হাজার। এখন দুই হাজার পুকুরও নেই। ড্রেন এবং খাল সংস্কার হচ্ছে না পরিকল্পিতভাবে। নদীর নাব্যতাও হ্রাস পেয়েছে। এসব কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই নগরী ডুবে যায়। সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় নগরবাসী দির্ঘমেয়াদে দুর্ভোগে পড়ছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী জাইক্যার পরামর্শক মো. তারিকুল হক বলেন, দেশের ৮০ ভাগ এলাকা এখন পানির নিচে। ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল, নিম্নচাপের লঘু চাপে অব্যাহত বর্ষন এবং জেয়ারের ফলে নদ-নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, বেরীবাঁধ করতে হলে অবশ্যই খালগুলোর মুখে স্যুইচ গেট দিতে হবে। তবে সেটা অনেক সময় উল্টো সুইসাইডাল হয়। তাই খাল-ড্রেন ব্যবস্থা আরও ইমপ্রুভ করার তাগিদ দেন তিনি।
বরিশাল পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের যাচাই-বাছাই চলছে। নাব্যতা বাড়াতে আপাতত নদ-নদী খননের বড় কোন প্রকল্প নেই। তবে চরমোনাই এলাকায় কীর্তনখোলার একটি বড় চর অপসারনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নগরীর ২৪টি খাল পুনরুদ্ধার ও সংস্কার, তীর সংরক্ষন ও সৌন্দর্য বর্ধনের আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি এবং অভ্যন্তরীন সড়ক ও ড্রেনেজ সংস্কারের ৮শ’ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প দুটি পাশ হলে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষাসহ নগরীর অবকাঠামোগত চেহারা পাল্টে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল