টানা আঠারো দিনের প্রচার-প্রচারণা শেষ। শনিবার রাত পোহালেই ভোট। তবে ভোটের আগেই রাজশাহীতে সহিংসতা শুরু হয়েছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজশাহীর তিন উপজেলার চারটি কেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সহিংসতার আশঙ্কায় মানুষ যেন ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয় সেজন্যই এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। তাই শুক্রবার থেকে রাজশাহীর ভোট কেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩১০ এবং বিভাগে ৩ হাজার ১১৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৩২ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার মোট ভোটার ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩০ জন ও নারী ভোটার ১০ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন।
রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনে তিন হাজার ১১৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে নওগাঁ জেলার একটি আসনের প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে ভোট হচ্ছে না। বাকি ৩৮টি আসনে ভোট হবে। এই আট জেলার ৫ হাজার ৪৩২টি কেন্দ্র আছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৫৮ শতাংশ।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় ছয়টি আসনের ৭৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩১০টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের ৫১২টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩২৫টি। নওগাঁ জেলার ছয়টি আসনে ৭৭৪টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪১৪টি। নাটোর জেলার চারটি আসনের ৫৬৬টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৫টি। পাবনা জেলার পাঁচটি আসনের ৭০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯৬টি। সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনের ৮৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৬৬টি। বগুড়ার সাতটি আসনের ৯৬৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৬৬২ ও জয়পুরহাটের দুটি আসনের ২৫৪টি মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৮৯টি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৮ জন। নারী ভোটার ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন। নওগাঁ জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ১৯ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৬ হাজার ২৫৬ জন। নারী ভোটার ১১ লাখ ১৩ হাজার ২৫ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১০ জন। নাটোর জেলার মোট ভোটার ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৯০ জন। নারী ভোটার ৭ লাখ ৩১ হাজার ৪৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ১০ জন। পাবনা জেলার মোট ভোটার ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮০ হাজার ৭৯৬ জন ও নারী ভোটার ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮১ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৩ জন।
সিরাজগঞ্জ জেলার মোট ভোটার ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৬১০ জন। নারী ভোটার ১২ লাখ ৪২ হাজার ৪৮১ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ১৯ জন। বগুড়া জেলার মোট ভোটার ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৬ জন। পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৭ জন। নারী ভোটার ১৪ লাভ ৪২ হাজার ৬৪৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৬ জন। জয়পুরহাটের মোট ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৪ জন। নারী ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন সাতজন।
রাজশাহীর নির্বাচন কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোট কেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এর পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না।
রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, রাজশাহী বিভাগে ৩৯টি আসন আছে। একটি মহানগরে, বাকি ৩৮টি রেঞ্জের মধ্যে আছে। এই আসনগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোথাও কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে। নির্বাচনের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল