সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছাত্র সংসদের খোঁজ নেই তবু ফি আদায় চলছেই

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) আইনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করা হচ্ছে। চলতি শিক্ষা বছর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নামে ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া সেই অর্থ কোথায়-কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সেশনে ভর্তি হন ১০ হাজার ৯৪৭ জন শিক্ষার্থী (২০১৭-১৮ সেশন পর্যন্ত)। ভর্তির সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বাবদ ২০০ টাকা করে ফি আদায় করা হয়। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নামে আদায় হয়েছে। কিন্তু এই অর্থের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট দফতরে। তা ছাড়া তৈরি করা হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠনের কাঠামোগত রূপ। নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগও। অথচ শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠনের নিয়ম রয়েছে। ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের পাঠ চর্চার পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমে উৎসাহ দেয়। শুধু তাই নয়, সেশনজট নিরসন, পরিবহন সমস্যা, চিকিৎসাসেবা, আবাসিক সুবিধাসহ হলে ভর্তুকি, অতিরিক্ত শিক্ষা ফি বন্ধের দাবির মতো নানা অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ জরুরি হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্রনেতা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে ছাত্র সংসদ না থাকলেও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে বেরোবি শাখা ছাত্রলীগ মাঝে মাঝে আওয়াজ তুলে। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবে বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলো মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। তবে মাঠে সংগঠনের কর্মীদের সংখ্যা কম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কুলিয়ে উঠতে পাওে না। প্রতিকূল পরিবেশ আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অনেকটা মেরুদ হীন হয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সম্প্রতি বিষয়টি আরও নাজুক আকার ধারণ করেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি যুগেশ ত্রিপুরা বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন অবিলম্বে হওয়া উচিত। তাহলে বছর বছর যে ফি আদায় করা হচ্ছে আমাদের কাছ থেকে সেটার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সহজ হবে। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠগুলো নিয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করা।

এ ব্যাপারে বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোন্নাফ কিবরিয়া আল তুষার বলেন, ছাত্র সংগঠনের গণতন্ত্র চর্চার জন্য ছাত্র সংসদ অন্যতম মাধ্যম। ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে হলেও আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের শিক্ষক সমিতির সভাপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ার জানান, ছাত্রদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা দরকার। দেশের সব বিশ^বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবেন এমন একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ছাত্রসংসদ নির্বাচন করার সুযোগ আপাতত নেই। আমরা আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা সংগ্রহ করা হয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় হিসেবে দেখানো হয়। সে অর্থ শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই কোনো না কোনোভাবে ব্যবহৃত হয়।

এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন হওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নেব। আর আইন সংশোধন তো সহজ বিষয় নয় এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আইন সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর