শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বছর বছর আগুন বেনাপোল বন্দরে

দশ বছরে আট আগুনে পুড়ে ছাই কয়েক কোটি টাকার পণ্য

বকুল মাহবুব, বেনাপোল

বছর বছর আগুন বেনাপোল বন্দরে

আগুনের প্রচন্ড ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। বন্দরের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকলেও তা অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে পণ্যাগারগুলো। বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে আমদানি করা অতি দাহ্য পণ্যের সঙ্গে সাধারণ পণ্যও রাখা হচ্ছে। এতে আগুনের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের সংগঠনগুলো বলছে, গত ১০ বছরে বেনাপোল বন্দরে আটবার আগুন লেগেছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় প্রতিবারই আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ডাকতে হয়েছে দেশি-বিদেশি দমকল বাহিনী। পুড়ে গেছে আমদানি করা কোটি কোটি টাকার পণ্য। কিন্তু কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে বন্দরে যেসব সরঞ্জাম আছে সেগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সর্বশেষ গত ২৬ আগস্ট বন্দরের ৩৫ নম্বর শেডে আগুন লেগে মোটা অঙ্কের টাকার পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলে ৩৮টি গুদাম ও ওপেন ইয়ার্ড আছে। যার ধারণক্ষমতা ৪৭ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন পণ্য। কিন্তু রাখা হচ্ছে তিনগুণের বেশি প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। সরেজমিন বন্দরের ৩৪ নম্বর গুদামে গিয়ে দেখা গেছে, ৪০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার এ গুদামে পণ্য রয়েছে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন। অতি দাহ্য ও সাধারণ পণ্য একই জায়গায় পাশাপাশি রাখা হয়েছে। গুদামের এক কোনায় পণ্যের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। যার সবগুলোই অকেজো। গাদাগাদি করে পণ্য রাখায় অগ্নিঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। পাশের ৩২ নম্বর গুদামের চিত্র একই রকম। আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলোও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দেখলেই বোঝা যায়, বহুকাল যন্ত্রগুলো ব্যবহার হয়নি। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর বন্দরের ২৩ নম্বর গুদামে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পের আমদানি করা কাপড়, ডাইস, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সামগ্রী, গাড়ি ও শিল্পের যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ, ফাইবার, মশা তাড়ানোর স্প্রে, তুলা, কাগজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পুড়ে যায়। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। তখন তদন্ত কমিটি করা হলেও তিন বছরেও ব্যবসায়ীরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা নেই। গুদামে অতি দাহ্য পণ্যের সঙ্গে সাধারণ পণ্যও রাখা হচ্ছে। এতে সেখানে আগুনের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা বাড়াতে হবে। আগুন নেভানোর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।’ যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান জানান, বেনাপোল বন্দরের শেডে কয়েকবার আগুন লাগায় অনেক ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আমরা বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ১০ বছরে বন্দরে অন্তত ৮ বার আগুন লেগেছে। এতে শত শত কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। ব্যবসায়ীরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন, বন্দরের ভাড়া দিচ্ছেন, অথচ তাদের আমদানি পণ্যের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। রহস্যজনক কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব পণ্যের বীমাও করে না।

এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস বলেন, এখন গরমের সময়। তাই যে কোনো সময় আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য আমরা সতর্ক আছি। প্রতিটি গুদামে ফায়ার হাইডেন পয়েন্ট ও ফায়ার পাম্প রয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলো দ্রুতই ত্রুটিমুক্ত করা হবে।

সর্বশেষ খবর