মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভিসির বিদায়বেলার কর্মকান্ড নিয়ে তোলপাড়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি একজনকে পদায়ন

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্ক যেন ছাড়ছেই না। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে উপাচার্যের (ভিসি) বিদায়ের পর রুটিন ভিসির দায়িত্বে থাকাকালে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানের বিদায়ী কর্মদিনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ইস্যুতে কারণ দর্শানোসহ কয়েকজনকে বদলি করেছেন। এমনকি সিন্ডিকেটের সভা ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত এক কর্মকর্তাকে দায়িত্বে পুনর্বহাল করেন বলে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকা  রুটিন ভিসির এখতিয়ারবহির্ভূত উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। গত ৭ অক্টোবর বিদায় নেওয়ার আগের কয়েক দিনে তিনি এ কাজগুলো করেছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোর্শিদ আবেদীনকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ, গণমাধ্যমে মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন রুটিন ভিসি। নোটিসে কারণ দর্শানোর আগ পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাত দিনের সময় দিয়ে রুটিন ভিসি স্বাক্ষরিত ওই কারণ দর্শানোর চিঠি তিনি হাতে পেয়েছেন ১৩ অক্টোবর। নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, রুটিন ভিসি ড. মাহবুব হাসান ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন এবং দায়িত্ব থেকে বিরত থাকতে বলেছেন; যা তার এখতিয়ারবহির্ভূত বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে সিন্ডিকেটের সভা কিংবা সিদ্ধান্ত ছাড়াই রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে প্রায় এক বছর আগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক বরুণ কুমার দেকে একই পদে পদায়ন করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল তিনি যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের শাখা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে সংস্থাপন শাখার এসও, অর্থ শাখার এসও জসিমউদ্দিনকে শেরেবাংলা হলের এসও এবং ক্রীড়া দফতরের সহকারী পরিচালক বাহাউদ্দিন গোলাপকে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে বদলি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রুটিন ভিসির ঘনিষ্ঠ ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক পদ দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আতিকুর রহমান জোরপূর্বক অর্থ শাখায় বিভিন্ন বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল শিক্ষক-কর্মকর্তারা জানান, রুটিন দায়িত্বে থাকা ভিসি কাউকে বদলি করতে পারেন না। ভিসির রুটিন দায়িত্বে থাকাকালে ট্রেজারার তার অনুগত কর্মকর্তাদের সুবিধা দিতে এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ করেছেন। তাদের দাবি, সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়া কোনো কর্মকর্তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। শেরেবাংলা হলের এসও হাবিবুর রহমানকেও শেষ সময়ে পদায়ন করে গেছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘ভিসির রুটিন দায়িত্বে থেকে নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কাউকে বদলি, পদায়ন কিংবা কারণ দর্শানো রুটিন ভিসির কাজ নয়।’

সদ্যবিদায়ী রুটিন ভিসি ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান গতকাল মুঠোফোনে এখতিয়ারবহির্ভূত কর্মকান্ডের বিষয়ে বলেন, তিনি এখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন। দায়িত্বে থাকাবস্থায় কী করেছেন তা নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চান না।

এদিকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ দিয়েও পরে পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য ড. মাহবুব হাসানের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন শিক্ষকরা। বিগত বছরগুলোয় নভেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় রুটিন উপাচার্য ১৮ ও ১৯ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার তারিখ প্রস্তাব করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় ওই প্রস্তাব গৃহীত হলে প্রশ্নপত্র ছাপানোসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্ত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মে উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়। সব শেষ গত ৭ অক্টোবর শেষ হয় রুটিন উপাচার্য ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানের মেয়াদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর