শিরোনাম
শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৯ শুরু

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৯ শুরু

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে গতকাল ঢাকা লিট ফেস্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশি-বিদেশি কবি-সাহিত্যিক, নাট্যকার, অনুবাদকদের পদচারণায় মুখরিত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। একদিকে সাহিত্যিকদের মিলনমেলা, অন্যদিকে বর্ধমান হাউসের সামনে থেকে ভেসে আসছিল লালনের গানের সুর। আর এর পাশে বিভিন্ন স্টলে শোভা পাচ্ছিল নানা ধরনের বই। এমন প্রাণোচ্ছল পরিবেশে সকাল ৯টায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল লিট ফেস্ট-২০১৯’। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের সেতুবন্ধ রচনার প্রত্যয়ে গতকাল সকাল ১০টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শুরু হয় এ উৎসব। উদ্বোধনী আয়োজনের শুরুতেই সুরের সঙ্গে শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল ‘সাধনা’। এরপর উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন যৌথভাবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও ম্যানবুকার পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া সাহিত্যিক মনিকা আলী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উৎসব পরিচালক সাদাফ আকবার, কাজী আনিস আহমেদ এবং আহসান আকবর, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান। কে এম খালিদ বলেন, বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করাই ঢাকা লিট ফেস্টের মুখ্য উদ্দেশ্য। ২০১১ সালে এ সাহিত্য উৎসব যখন যাত্রা শুরু করে তখন এর নাম ছিল ‘হে লিটারেরি ফেস্টিভ্যাল’। তখন সাহিত্য উৎসবটি সমাজের এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করত।

২০১৫ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ এবং এর পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্ত হয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। ফলে উৎসবটি সার্বজনীনতা লাভ করে এবং ঢাকা তথা বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে সঠিকভাবে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়।’

মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী স্থানীয় তথা বাঙালি সংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে এ থেকে উত্তরণের উপায় নির্ধারণের জন্য প্রতিমন্ত্রী বিদেশি অতিথিদের অনুরোধ করেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য উৎসবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক-চিন্তাবিদদের স্ব স্ব দেশের সরকারের মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আহ্বানও জানান তিনি।

উৎসব পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, আমরা ঢাকা লিট ফেস্ট আয়োজন করি একটি চিন্তার উৎসব হিসেবে। আমাদের গভীর আশা, বাংলাদেশ এবং তার গোটা জনবল একদিন মুক্তচিন্তার বিশাল, সুদৃঢ় পাটাতনে পরিণত হবে।’

আরেক পরিচালক আহসান আকবর বলেন, ‘ঢাকা লিট ফেস্ট ফিকশনের সঙ্গে বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের সঙ্গে কবিতা, কবিতার সঙ্গে কলার মেলবন্ধন ঘটায় বাকস্বাধীনতা, বহুত্ববাদ এবং রাজনীতির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও মুক্তচিন্তার গুরুত্ব নিয়ে আমাদের আয়োজন সাজানো হয়।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এই আয়োজন আমাদের হৃদয়ের সংযোগ, মস্তিষ্কের সংযোগ, বিশ্বরেখায় পথযোগাযোগ।

বাংলাদেশি বংশো™ভূত ব্রিটিশ লেখক মনিকা আলী বলেন, এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি গর্বিত। ১৯৭১ সালে মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছি। কিন্তু তারপর আর আসা হয়নি। এখন ঠিক করে বাংলা ভাষাটাও বলতে পারি না। এজন্য অবশ্য দুঃখ হয়। এত সমৃদ্ধ  যে ভাষা, সে ভাষা আমি জেনেও ভুলে গেছি। তবে এ ভাষার প্রতি ভালোবাসাটা কমেনি।

১৮ দেশের প্রায় তিন শতাধিক লেখক-সাহিত্যিক-চিন্তাবিদ অংশ নিচ্ছেন এবারের উৎসবের শতাধিক অধিবেশনে। এদের মধ্যে রয়েছেন মনিকা আলী, ‘চৌরঙ্গী’-খ্যাত পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত সাহিত্যিক শংকর, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী লেখক জেফরি গেটলম্যান, ডিএসসি অ্যাওয়ার্ড ফর সাউথ এশিয়ান লিটেরেচার পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক এইচ এম নাকভি, ইতিহাসভিত্তিক লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পল, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও লেখক শশী থারুর, কবি তিশানি দোশি, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, কবি ও সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত, ভারতীয় সাংবাদিক প্রেয়াগ আকবর, ফিনিশ সাংবাদিক মিন্না লিন্ডগ্রেন, ব্রাজিলের কথাসাহিত্যিক ইয়ারা রড্রিগেজ প্রমুখ।

বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলন, শাহীন আখতার, মোস্তফা কামাল, আসাদুজ্জামান নূর, ফখরুল আলম, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, শামসুজ্জামান খান, আনিসুল হক, কামাল চৌধুরী, আফসান চৌধুরী, কাইজার হক ও খাদেমুল ইসলাম।

এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘হাসিনা : অ্যা ডটারস টেল’- এর বিশেষ প্রদর্শনী ও তা নিয়ে আলোচনা। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের আগাম আয়োজন হিসেবে থাকছে আলোচনা ও তাকে নিবেদিত কবিতা পাঠের আসর। বিকালে উৎসবের প্রথম দিনেই দেওয়া হবে জেমকন সাহিত্য পুরস্কার।

কাল শনিবার শেষ হবে তিন দিনের এই উৎসব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর