সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নকশা চূড়ান্ত না হলেও চলছে নভোথিয়েটারের কাজ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

নকশা চূড়ান্ত না হলেও চলছে নভোথিয়েটারের কাজ

রাজশাহীতে চলছে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের প্লানেটরিয়াম নির্মাণ কাজ। অথচ এর নকশাই চূড়ান্ত হয়নি। তারপরেও ৩৯ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের প্লানেটরিয়াম ব্লকের ভিত নির্মাণ শেষ হয়েছে। চলছে গ্রাউন্ড ফ্লোরের ছাদ নির্মাণ। এই অংশেই নির্মাণ হবে প্লানেটরিয়ামের প্রধান অংশ ডোম। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি ডোমের নকশা। ফলে ডোম বাদ রেখেই অন্যান্য অংশের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ২ দশমিক ৩০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রাজশাহীর প্রথম নভোথিয়েটার। নানা জটিলতা শেষে নভোথিয়েটারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের শেষ দিকে। এর বাস্তবায়নে ১৮ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। সে হিসেবে কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে এ বছরের মাঝামাঝিতে। জানা গেছে, এই নভোথিয়েটারে আধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল প্রজেক্টর সিস্টেমযুক্ত প্লানেটরিয়াম, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ডিজিটাল এক্সিবিটস, ফাইভ-ডি সিমিউলেটর থিয়েটার, টেলিস্কোপ, কম্পিউটারাইজড টিকিটিং অ্যান্ড ডেকোরেটিং সিস্টেমসহ নানা সুবিধা থাকবে। ভবন নির্মাণ শেষ হলে দ্রুত অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংযোজন হবে নভোথিয়েটারে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ২২২ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয় ধরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, রাজশাহী স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি তারা হাতে নিয়েছিলেন। এটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৫-২০১৮। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি এখন বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদফতর।

                তিনি জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিশেষত মহাকাশ সম্পর্কিত জ্ঞান সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করা, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং বিজ্ঞান সংশ্লিøষ্ট কুসংস্কার দূর করতে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনাও আছে। বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক নাগরিক তৈরিতে বিজ্ঞানের সুযোগ-সুবিধা রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে দেওয়াই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০১৫ সালের আগস্টে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি ওই বছরের ডিসেম্বরে যায় একনেকে। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় পাস হয়। প্রথমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সময়কাল ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। একনেক সভায় সময়সীমা ৬ মাস বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এর নকশা দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অমিত কুমার দেব বলেন, ২২২ কোটি ৩ লাখ টাকার মধ্যে কেবল অবকাঠামো নির্মাণেই ব্যয় হচ্ছে ৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা। রাজধানী ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, গত বছরের ২২ অক্টোবর শুরু হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। নির্ধারিত স্থানটিতে বড় বড় গাছসহ চিড়িয়াখানার বেশ কিছু প্রাণীর খাঁচা ছিল। এগুলো সরিয়ে জমি বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব হয়েছে। ফলে প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে বিলম্বে।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নভোথিয়েটারের চার তলা ভিত বিশিষ্ট অফিস ব্লকের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ৭ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের এই অংশের বাকি কেবল ফিনিশিং। আর ৩৯ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের প্লানেটরিয়াম ব্লকের বেসমেন্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গ্রাউন্ড ফ্লোরের ছাদ নির্মাণ কাজ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম) মোশাররফ হোসেন বলেন, ডোম নির্মাণের দরপত্র হয়নি এখনো। নকশাও চূড়ান্ত হয়নি। তবে ডোমের নির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে তারা নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন। প্লানেটরিয়ামের এই অংশের নকশা ও দরপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অমিত কুমার দেব।

তবে প্রকল্পের আরেক তদারকি কর্মকর্তা গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানা জানান, এ পর্যন্ত ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোর মূল কাজ ডোম নির্মাণের দরপত্র হয়নি এখনো। কেবল প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনা পাস হলে তবেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। তারপরও এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০২০ সালের মধ্যেই অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর