বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসমাত আরা সাদেক এমপি আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও যশোর

ইসমাত আরা সাদেক এমপি আর নেই

যশোর-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক আর নেই। গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক জানিয়েছেন। আজ বুধবার সকাল ১১টায় নির্বাচনী এলাকা যশোরের কেশবপুরে নামাজে জানাজা শেষে বগুড়ার সাতানিবাড়ী পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন সরকারদলীয় এই এমপি। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।  সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকাল সোয়া ৫টায় অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজা শেষে মরহুম ইসমাত আরা সাদেকের কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয়বার পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন শেখ হাসিনা। এরপর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীসহ হুইপবৃন্দ এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। এর আগে মরহুমের সংক্ষিপ্ত জীবন-বৃত্তান্ত পাঠ করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।  পরে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। 

 

জানাজায় অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম, আতিউর রহমান আতিক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সামশুল হক চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সমাজের বিশিষ্টজনরা।  

ইসমাত আরা সাদেক ১৯৪২ সালের ১২ ডিসেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে তিনি ও তাঁর স্বামী এ এস এইচ কে সাদেক আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসনে (কেশবপুর উপজেলা) এমপি হন। এরপর ২০১৪ তে নতুন সরকার গঠিত হলে প্রথমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি আবারও যশোর-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ইসমাত আরা সাদেকের স্বামী মরহুম এ এস এইচ কে সাদেক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। 

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সরকারি দলের কাজী নাবিল আহমেদ, ওয়াশিকা আয়েশা খান, আ ক ম সারোয়ার জাহান ও জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান।

আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সত্যিই আমাদের দুর্ভাগ্য, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চারজন সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকার, ডা. মোজাম্মেল হক, আবদুল মান্নান এবং সর্বশেষ ইসমাত আরা সাদেক মারা গেলেন। তিনি বলেন, মানুষ জন্ম নিলে মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু সত্যিই অত্যন্ত কষ্টের, বেদনার। প্রয়াত সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের কর্মজীবনে সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেম ছিল অসামান্য। হঠাৎ করেই এত তাড়াতাড়ি তিনি এভাবে চলে যাবেন তা কখনো ভাবতেও পারিনি। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সব কাজ করতেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইসমাত আরা সাদেক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু কখনো রাজনীতিতে খুব সক্রিয় ছিলেন না। তাঁর স্বামী এ এস এইচ কে সাদেক ’৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সেই সময় যখন আমরা সরকার গঠন করতে পারলাম নাÑ তখনই তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই থেকে দুজন একসঙ্গে আসতেন, কথা হতো। তিনি বলেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী সাদেকের মৃত্যুর পর মিসেস সাদেককে যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুরোধ করলাম, তখন প্রথমে তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলেছিলেন, আমি এটা করতে পারব? আমি বলেছিলাম আপনি পারবেন। ওই নির্বাচন করে জিতে আসার পর প্রথমে তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলাম। তখন ইসমাত আরা সাদেক বললেন, আমি তো কখনো এভাবে অফিস চালাইনি, কখনো কিছু করিনি, আমি তো গৃহিণী ছিলাম। আমি কীভাবে করব? আমি বলেছিলাম, যেহেতু আপনি শিক্ষিত মহিলা, আমি আছি আপনার সঙ্গে, কোনো চিন্তা নেই। যখন যা দরকার হবে আপনি বলবেন, আর আপনি পারবেন এটা আমার বিশ্বাস আছে। এরপর প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সততার সঙ্গে করে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ইসমাত আরা সাদেককে জনপ্রশাসনের দায়িত্ব দিলাম। তখনও তিনি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁর সঙ্গে বসতাম। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি কাজ করতেন। প্রতিটি কাজে তাঁর সততা ও একাগ্রতা ছিল অসামান্য। তিনি অত্যন্ত গোছালোভাবে কাজ করতেন। আমাদের অনেকগুলো নীতিমালা, বিধিমালা, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত করা, জনপ্রশাসনকে আরও গতিশীল করা, কোথায় কত জায়গা খালি আছে, সেখানে আরও কীভাবে আমরা আরও চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি- এসব ব্যাপার অত্যন্ত সুচারুভাবে উনি করতেন। সবচেয়ে বড় কথা ছিল তিনি অত্যন্ত সততা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতেন। সবচাইতে বড় গুণ হলো উনার সততা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেম।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইসমাত আরা সাদেক অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর স্বামী প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেকও ছিলেন অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত ও অভিজাত পরিবারের সদস্য। আমাদেরকেও চলে যেতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর