শিরোনাম
সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সক্ষমতা বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরের

কেনা হচ্ছে ৯০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

সক্ষমতা বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরের

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেশকিছু ইক্যুইপমেন্ট কিনতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৯০০ কোটি টাকার বাজেটে ১০৪টি ইক্যুইপমেন্ট (যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ) কেনা হচ্ছে শিগগিরই। বন্দরের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এসব ইক্যুইপমেন্ট কেনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও গতিশীল করতে এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে এসব যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হচ্ছে। এজন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। এর মধ্যে চারটি ‘কি গ্যান্ট্রি ক্রেনে’র জন্য খরচ হবে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা। এ চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হলে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গ্যান্ট্রি ক্রেনের চাহিদা শতভাগ পূরণ হবে। এছাড়া রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) রয়েছে ১১টি। নতুন যন্ত্রপাতির মধ্যে আরও থাকছে- স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার (ফোর-হাই) ২১টি, স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার (টু-হাই) ছয়টি, রিচ স্টেকার (লোড) চারটি, কনটেইনার মোভার দুটি, ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক (৪৫ টন) চারটি, মোবাইল ক্রেন (১০০ টন) দুটি, মোবাইল ক্রেন (৫০ টন) দুটি, মোবাইল ক্রেন (৩০ টন) দুটি, মোবাইল ক্রেন (২০ টন) ১২টি, মোবাইল ক্রেন (১০ টন) ২৩টি, লগ হ্যান্ডলার-স্টেকার দুটি, ফর্ক লিফট ট্রাক (২০ টন) চারটি, ম্যাটেরিয়াল-মাল্টি হ্যান্ডলার (৩৫ টন) একটি, লো বেড ট্রেইলার দুটি, হেভি ট্রাক্টর-পাওয়ার দুটিসহ মোট ১০৪টি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বৃহৎ বাজেটে এসব ইক্যুইপমেন্ট কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন হয়েছে। আমাদের কাজের যে প্রবৃদ্ধি রয়েছে তা সামলাতে হলে এসব যন্ত্র কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুন এসব যন্ত্র যুক্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দর আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। বন্দরের পণ্য দ্রুত খালাসের জন্য এসব ইক্যুইপমেন্ট খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, নিয়মিত ব্যবহার এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে ইতিমধ্যে পুরনো অনেক ইক্যুইপমেন্ট অকেজো হয়ে পড়েছে। অনেক যন্ত্রাংশের সার্ভিসিং (মেরামত) করার নির্ধারিত সময়ও পেরিয়ে গেছে। সবদিক বিবেচনা করে নতুন ইক্যুইপমেন্টগুলো যুক্ত হচ্ছে বন্দরের বহরে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই মাসে চীন থেকে ক্রয় করা চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফায় তিনটি করে ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয় বন্দরের বহরে। এরপর ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটিই হবে বন্দরের যন্ত্রাংশের জন্য বৃহৎ বাজেটের ক্রয় প্রকল্প। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল (যান্ত্রিক) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে ক্রয় করা গ্যান্ট্রি ক্রেনে বিভিন্ন সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে। তাই এবারের গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং অন্যান্য যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ আর চীন থেকে কেনা হচ্ছে না। এবার ইউরোপ থেকে কেনার সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, কনটেইনার ওঠা-নামার সবচেয়ে কার্যকর ইক্যুইপমেন্ট হলো ‘কি গ্যান্ট্রি ক্রেন’। চট্টগ্রাম বন্দরে গত ১৫ বছর ধরে ছিল মাত্র চারটি। এই চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেনের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণে প্রায় দুই বছর অচল ছিল দুটি। ২০০৫ সালে জাপানের মিতসুবিসি থেকে নেওয়া এসব গ্যান্ট্রি ক্রেনের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩০ সালে। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণে সময় বেশি লাগছে বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৪ সালে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২১৯, ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯, ২০১৭ সালে কনটেইনার ওঠা-নামা হয়েছে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার টিইইউএস। ২০১৮ সালে কনটেইনার ওঠা-নামা হয়েছে ২৯ লাখ তিন হাজার টিইইউএস। ২০১৯ সালে ৩১ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। নতুন যন্ত্রাংশ যুক্ত হলে এনসিটির সবটিতেই দ্রুত পণ্য ওঠা-নামা ও পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে কম সময়ে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি, পণ্য ওঠা-নামার হারও কয়েকগুণ বাড়বে। ফলে বিদ্যমান জেটি দিয়েই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি সামাল দেওয়া সক্ষম বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর