বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

জায়গা জটিলতায় আটকে আছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কেবল প্রয়োজনীয় জায়গা না পাওয়ায় আটকে আছে দেশের সবচেয়ে বড় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের নির্মাণকাজ। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এই ম্যুরালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কথা ছিল এ বছরের ১৭ মার্চ নির্মাণকাজ শেষে সেটির উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু এই সাড়ে চার মাসে একটি ইটের গাঁথুনিও দিতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় জেলা পরিষদ প্রয়োজনীয় জায়গা       দিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু এখন ১৯ শতকের বেশি জায়গা দিতে রাজি নয় সংস্থাটি। ফলে বেকায়দায় পড়েছে সিটি করপোরেশন। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া প্রকল্প শুরুই করতে পারছে না তারা। জানা গেছে, ফলক উন্মোচনের পর জায়গার প্রশ্নে বেঁকে বসে জেলা পরিষদ। তারা বলছে, অনেক আগেই ওই স্থানের ১৯ শতাংশ জায়গা সিটি করপোরেশন ব্যবহার করে আসছিল। কথা ছিল, ওই জায়গাটুকুর মধ্যেই তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করবে। কিন্তু এখন সিটি করপোরেশন আরও ৪২ শতাংশ জায়গা চায়। বাড়তি জায়গা দিতে হলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের সীমানা প্রাচীর ভাঙতে হবে। তাছাড়া ওই স্থানের পাশেই আধুনিক ডাকবাংলো নির্মাণ করতে চায় জেলা পরিষদ। তাই নতুন করে বাড়তি জায়গা দিতে চায় না তারা।

রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ‘রাজশাহীতে আমরাই প্রথম বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করেছি। সিটি করপোরেশন আরেকটি ম্যুরাল নির্মাণ করতে চাইলে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন আরও জায়গা চায় জেলা পরিষদের কাছে। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত ২৪ ডিসেম্বর মিটিং করেছিলাম। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে জায়গাটুকু তারা আগে থেকেই ব্যবহার করছিল, সেখানেই ম্যুরাল করলে কোনো সমস্যা নেই। বাড়তি জায়গা দিতে হলে আমাদের নিজস্ব স্থাপনার ক্ষতি হবে।’

এদিকে জায়গা নিয়ে সংকট দেখা দেওয়ায় কিছুদিন আগে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জেলা পরিষদের কাছে মতামত তলব করেছে। এরই মধ্যে নিজেদের মতামত মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে জেলা পরিষদ।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দসহ সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপরও নতুন করে এখন কেন এই সংকট তৈরি হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জানে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসলেই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র ও নকশা বাছাই শেষ হয়েছে। এখন প্রকল্পের কাজ শুরুর অপেক্ষায় সিটি করপোরেশন।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের শিল্পমান বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন, শিল্পকলা ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এসএম জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সংগ্রামী ইতিহাস ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর বড় ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে। এটি দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা হতে যাচ্ছে। তাই আমরা এর বেদি ও বঙ্গবন্ধুর অবয়বসহ পুরো নকশার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পর্যালোচনা করে মতামত দিয়েছি। আমরা যে নকশাটি চূড়ান্ত করেছি তাতে আরও বৃহৎ পরিসরে জায়গার প্রয়োজন।

মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জায়গা জটিলতায় এখনো কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এপ্রিল-মে মাসের দিকে কাজটি শুরু করা যাবে। এটি বন্ধ হবে না বলেই তিনি আশাবাদী।

 রাজশাহী সিটি করপোরেশন জানায়, ৫০ ফুট উচ্চতার এই ম্যুরাল হবে দেশের অনন্য স্থাপনা। এ প্রকল্পে অর্থের জোগান দিচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর