রবিবার, ১৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকা মেডিকেলে ৯ জনসহ সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টে ১৫ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৯ জন রোগী মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, বাগেরহাট,  নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ ও বাগেরহাটের বাসিন্দা। সব মিলে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাগুলোতে। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ৯ জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৯ জন হলেন- ঢাকার সাইফুল ইসলাম (৬৫), রহিমা বেগম (৬৭), কাজী রহিম (৩৮),  মো. শহিদ (৪৮), কুমিল্লার আবদুল মান্নান (৬০), গাজীপুরের আবদুর রশিদ (৬৫), নুরুল ইসলাম (৬০), গোপালগঞ্জের সিদ্দিকুর রহমান (৬০) ও নারায়ণগঞ্জের আওলাদ (৪৫)। এদের মধ্যে সাইফুলের করোনা পজিটিভ ছিল।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ব্যবসায়ী অমিয় দাস (৬০) করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। গত শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে তার মৃত্যু হয়। জানা গেছে, ভৈরবের চন্ডিবের নিজ বাড়িতে বৃহস্পতিবার তার শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশিসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। পরে তিনি নিজেই ভৈরব ট্রমা সেন্টারে যান, ওখানে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১১টায় তার মৃত্যু হয়। রাতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাহ করা হয়। তার নমুনা পরীক্ষার ফল এখনো পাওয়া যায়নি।

দিনাজপুরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মহিদুল ইসলাম নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকালে দিনাজপুর শহরের ১০ নম্বর উপশহরের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। পরে সন্ধায় তার নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মীরা। জানা গেছে, কিছুদিন ধরে জ্বর-সর্দি থাকায় তিনি নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল কুদ্দুছ জানান, কিছুদিন ধরে জ্বর-সর্দিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে মহিদুল ইসলাম (৫৫) নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। শুক্রবার সন্ধায় করোনা উপসর্গ সন্দেহের কারণে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সদরে অবস্থিত আইসোলেশন ইউনিটে গতকাল (মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে) জয়নাল আবদিন নামে এক বৃদ্ধার (৬০) মৃত্যু হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কয়েকদিন আগে তিনি কর্মস্থলে অসুস্থ হলে তাকে গ্রামের বাড়ি হাতিয়ার চরকিং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন ডাক্তার শুক্রবার বিকালে তার বাড়িতে যান। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দেন। রাতে অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গতকাল ভোরে তিনি মারা যান। এদিকে এলাকার লোকজনের বাধার মুখে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়েরের নেতৃত্বে তার দাফন করা হয়। ১০ জন পুলিশ ও  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২ জন কর্মকর্তা নিহতের জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। নোয়াখালী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও চাটখিল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন (৫৫) করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। গতকাল ভোর ৫টার দিকে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে গত ৩ থেক ৪ দিন তিনি জ¦র ও গলাব্যথায় ভুগছিলেন। জানা যায়, গতকাল তিনি ঢাকায় নিজের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। গতকাল দুপুরের দিকে নিহতের লাশ নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে করোনায় আক্রান্ত নারীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই নারী গত ৮ মে শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক সমস্যার কারণে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। এরপর তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে তিনি মারা যান।

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বৈদ্যমারীতে জ্বর, কাশি ও সর্দিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে গতকাল অলক কুমার ঘোষ নামে এক গ্রাম্য চিকিৎসকের মৃত্যু। এই গ্রাম্য চিকিৎসক করোনাকালে বৈদ্যমারী বাজারে নিজ চেম্বারে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস জানান, শনিবার সকাল ১০টার দিকে অলক কুমার ঘোষ নামে এক গ্রাম্য চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর পাই। পরে তার বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাকে সৎকার করা হয়েছে। এ নমুনা খুলনা  মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর