বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মরদেহ দাফনে সাহসী সৈনিক ইয়াসিন শরীফ

ফেনী প্রতিনিধি

করোনায় গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে এমন সংবাদ শিরোনাম ‘করোনা উপসর্গে মৃতের লাশ দাফন করেনি পরিবার’, ‘করোনার ভয়ে ঢামেকের সামনে মাকে ফেলে চলে গেল সন্তান’, ‘সিঁড়িতে পড়ে রয়েছে সংখ্যালঘুর লাশ, দাফন করছে মুসলমান যুবক’। করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে মানবিকতা বোধ, করোনা দেখিয়ে দিয়েছে কেউ কারোর নয়। ঠিক এমন বিপর্যয়ের মুহূর্তে ফেনীর পরশুরামে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সে চিত্র মানবতা ও মানবিকতার। আর এই মানবিকতার সৈনিক ফেনীর পরশুরামের মো. ইয়াসিন শরীফ মজুমদার। স্বজনরা যেখানে মৃতদেহ রেখে পালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে তিনি ও তার দলের সদস্যরা নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে চেনা-পরিচয়হীন মানুষগুলোর লাশ দাফন করে চলেছেন। হয়ে উঠছেন করোনাকালীন মৃতদেহের স্বজন। মহামারী করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের ভয়, শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা যেন পিছু ছাড়ছে না। প্রিয়জনের শেষবিদায়ের দৃশ্য যে কারোর হৃদয়ে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করে। অসময়ে চলে যাওয়ার ক্ষণে যখন আপনজন দূরে থাকছেন, তখন মৃতদেহের গোসল করানো, কাফন পরানো, জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন অকুতোভয় সৈনিক ইয়াসিন শরীফ ও তার দল।

ইয়াসিন শরীফ মজুমদার পরশুরাম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। রাজনীতি করলেও করোনাকালে রাজনীতির পরিচয় ছাপিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি।

২০ এপ্রিল তিনি গঠন করেন ‘পরশুরাম উপজেলা করোনা স্বেচ্ছাসেবক টিম’। এক মাস ২০ দিনে দাফন করেছেন ১১টি মৃতদেহ। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ছিলেন পাঁচজন।

ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, চাকরিজীবী মিলিয়ে ইয়াসিন শরীফের দাফন টিমের সদস্য সাতজন। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন মুহাম্মাদ আলা উদ্দিন, মনছুর আহাম্মদ, মো. জহিরুল ইসলাম হৃদয়, নাহিদ হায়দার, এনামুল করিম আজাদ ও আবুল কালাম। ইয়াছিন শরীফ জানান, এই মৃত ব্যক্তিদের দাফনে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা একজন যুগ্ম-সচিবকে দাফন করতে গিয়ে এলাকার মানুষের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। এমনকি লাশের গোসল দিতে গিয়ে একটা বালতিও পাননি। এ রকম আরও হৃদয়বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। ইয়াছিন শরীফ বলেন, ‘করোনা দুর্যোগকালে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।’

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ইয়াসিন শরীফ মজুমদারের দাফন টিম ইতিমধ্যে উপজেলায় প্রশংসা কুড়িয়েছে। করোনা রোগী ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনে এ টিম উপজেলা প্রশাসনকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে আসছে।’

পরশুরাম পৌর মেয়র সাজেল চৌধুরী বলেন, উপজেলায় করোনায় কিংবা করোনা সন্দেহে মৃত ব্যক্তিদের দাফনে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না। লাশের স্বজন না থাকলেও ইয়াসিন শরীফ আছেন তার টিম নিয়ে। সব ধরনের নিয়ম মেনে মৃতদেহকে কবরস্থ করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর