ঢাকায় শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ (১১) নির্যাতনের ঘটনায় গৃহকর্তা ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিকস ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিন, তার স্ত্রী রাখি দাস এবং তাদের সহযোগী বাসু দেবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বরিশালে মামলা হয়েছে। শিশুটির চাচা তপন বাড়ৈ বাদী হয়ে গতকাল সকালে শিশু নির্যাতন দমন আইনে উজিরপুর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উজিরপুর থানার ওসি জিয়াউল আহসান। শিশু নিপা বাড়ৈ উজিরপুরের জামবাড়ী এলাকার মানসিক প্রতিবন্ধী ননী বাড়ৈর মেয়ে। তার মা দুই বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা মেজো। অভাবের সংসারে বেঁচে থাকার জন্য গত ছয় মাস আগে ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিকস ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে নিপা। এর পর বিভিন্ন সময় চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাস নানা অজুহাতে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করত। কখনো গরম খুনতির ছ্যাঁকা, কখনো ছুরির খোঁচা, আবার কখনো দেয়ালে ঠোকা হতো তার মাথা। কখনো তার গলা চেপে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা করত গৃহকর্তার স্ত্রী। অব্যাহত নির্যাতনে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নির্যাতনকারী লোক মারফত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা থেকে উজিরপুরের জামবাড়ী তার গ্রামের বাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে একটি দোকানের সামনে ফেলে যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ওই রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। নির্যাতনকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরদিন রাতেই তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তার স্বজনরা। কিন্তু শিশুটি অসুস্থ থাকায় চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দিতে রাজি হচ্ছিলেন না।
২৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে শিশুটিকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাপাত্তা হয়ে যায় তার স্বজনরা। এ ঘটনায় গতকাল উজিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শামসুদ্দোহা তৌহিদ। নিখোঁজের ২৩ ঘণ্টা পর গতকাল ভোর ৪টার দিকে পাশর্^বর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার আশোয়ার গ্রামের জনৈক বিমলের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিপাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে এই মামলা রুজু করে পুলিশ।