মসকুইটো ফিশ। মাছটি কিছুটা আমাদের দেশি দাড়কিনা মাছের মতো দেখতে। অ্যাকোরিয়ামগুলোতেও মাছটি বেশ শোভা পায়। মসকুইটো ফিশ নোংরা পানিতে খুব ভালোমতোই বেঁচে থাকতে পারে, সেই সঙ্গে বংশ বিস্তারও করে বেশ ভালোভাবে। এমনকি তাদের পেটেও প্রচুর পরিমাণে মশার লার্ভার দেখা মেলে। তাই এই মাছটিকে শহরের বদ্ধ জলাগুলোতে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ছেড়ে দিলে মশার বিস্তার রোধ অনেকাংশেই কমে আসবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদের গবেষণায় এসব জানা গেছে। এই কৃষি বিজ্ঞানী জানান, রাসায়নিক বালাইদমন পদ্ধতিগুলো ‘দ্রুত কার্যকর’ মনে হলেও এগুলোর প্রভাব স্বল্পমেয়াদের।
তাই শুধুমাত্র রাসায়নিক বালাইদমন করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ভুল। দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু টেকসই ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা হচ্ছে ‘জৈবিক বালাইদমন পদ্ধতি’।ড. হারুনুর রশীদ বলেন, জৈবিক উপায়ে মশা নিধন করার জন্য ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে একটি গবেষণা করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল মশা নিধনের জন্য (মশক লার্ভা ভক্ষণ) দেশি জাতের কিছু মাছের সঙ্গে বিদেশি জাতের মাছের দক্ষতা তুলনা করা। এটি করতে গিয়ে আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন ড্রেনের ও নর্দমার নোংরা পানিতে প্রচুর পরিমাণ ‘মসকুইটো ফিশ’ পেয়েছি এবং এরা এই নোংরা পানিতে খুব ভালোমতোই বেঁচে থাকতে পারে।
তিনি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রামে বেশ কয়েক বছর আগে এই মাছ ও গাপ্পি ছাড়া হয়েছিল বলে শুনেছি। আমি চট্টগ্রামের ড্রেনে গাপ্পি তেমন দেখিনি, কিন্তু এই ‘মসকুইটো ফিশ’ প্রচুর পরিমাণে দেখেছি। এ মাছগুলো ড্রেনের নোংরা পানিতে শুধু বছরের পর বছর টিকে আছে তাই নয়, বংশও বিস্তার করছে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ মশার লার্ভা খেয়ে আমাদের সাহায্য করছে। পরবর্তীতে ‘মসকুইটো ফিশ’ ছাড়াও আরও কিছু দেশি-বিদেশি মাছ ল্যাবরেটরিতে আমি পরীক্ষা করে দেখেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল মশার লার্ভা ভক্ষণে তাদের দক্ষতার তুলনা করা। গবেষণায় আমরা দেখেছি যে বিদেশি ‘মসকুইটো ফিশ’ বা গাপ্পির তুলনায় মশক লার্ভা ভক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের দেশি জাতের খলিসা মাছের দক্ষতা প্রায় দ্বিগুণ। বিদেশি মাছের তুলনায় দাড়কিনা মাছের দক্ষতাও ভালো লার্ভা দমনের ক্ষেত্রে, কিন্তু ড্রেনের অথবা নর্দমার পানিতে এই মাছ বেশিদিন টিকে না। কিন্তু খলিসা শুধু মশার লার্ভা ভক্ষণেই ভালো নয়, এটির ড্রেনের পানিতে অভিযোজন ও টিকে থাকার হারও ভালো। এসব মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন খুবই সহজ।
শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশা দমন করা সম্ভব নয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরনের রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। তাই মশার বিস্তার রোধে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। সমন্বিত ব্যবস্থাপনাগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু টেকসই ও কার্যকর ব্যবস্থাপনাগুলো মূলত ‘জৈবিক বালাইদমন পদ্ধতি’।