বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কী পরিকল্পনা করছে ঢাবি

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ক্যাম্পাস। দীর্ঘ হচ্ছে সেশনজট

নাসিমুল হুদা, ঢাবি

কী পরিকল্পনা করছে ঢাবি

করোনার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম। অনলাইনে ক্লাস ও ইনকোর্স পরীক্ষাসমূহ চললেও অনেক সেমিস্টারের সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। ফলে দীর্ঘ সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে সেশনজট নিরসনে অতিরিক্ত ক্লাস, মূল্যায়ন পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা, সিলেবাস কমিয়ে আনা এবং সেমিস্টারের সময়সীমা কমানো প্রভৃতি বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের যাতে বড় কোনো সেশনজটে পড়তে না হয়, সে জন্য যথাসময়ে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত বছর ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। তবে অচলাবস্থা কাটাতে বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে শুরু করে বিভাগগুলো। ওই সময় চলমান সেমিস্টারের ক্লাস ও ইনকোর্স পরীক্ষাসমূহ নেওয়া শেষ হয়ে গেলে সমাপনী পরীক্ষা না নিয়েই পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাসও শুরু করা হয়। ওই সেমিস্টারের ক্লাসও শেষ পর্যায়ে। সব মিলিয়ে ইতিমধ্যে এক বছরের সেশনজটে পড়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ১৩ মার্চ হল খুলে দিয়ে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু আগামী ২৩ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণার পর সেই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ২৩ মে তারিখটি বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কতটা ঠিক রাখা যাবে এ নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় সেশনজট আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সেশনজট নিরসনে পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে দীর্ঘ সেশনজটে না পড়ে, সে জন্য কৌশল বের করতে হবে। এ জন্য যথাসময়ে আলাপ-আলোচনা করে দেখতে হবে, শিক্ষকরা কী ভাবছেন। কভিডের কারণে সারা বিশ্বই একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটের মধ্যে পড়েছে। সেই সংকটের মধ্যে আমরাও আছি। সেশনজট নিরসনের বিষয়টি আগে থেকে অনুমান করা যায় না। এর জন্য যথাসময়ে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন নীতি-কৌশল ঠিক করতে হবে। এদিকে সেশনজট মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রদানের কথা জানান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তবে বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সেশনজট কমাতে পরিকল্পনার অনেকটাই নির্ভর করছে কত তাড়াতাড়ি আমরা কভিড থেকে মুক্তি পাচ্ছি এর ওপর। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যে তারিখ দেওয়া হয়েছে, কভিডের আরেকটি ঢেউ এলে তো সেটি পরিবর্তন হতে পারে। তবে সেশনজট মোকাবিলায় আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, পরিকল্পনার মধ্যে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা, পরীক্ষা গ্রহণ, সিলেবাস ও সেমিস্টারের সময়সীমা কমিয়ে আনার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ চান এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা খাতে আমাদের যে বরাদ্দ তা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। এ সুযোগে তা বাড়িয়ে নেওয়া গেলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠ্য কার্যক্রমে সংযুক্ত করতে ইন্টারনেট সংযোগ সংবলিত একটি ল্যাপটপ দেওয়া যেত। এটি এখনো সম্ভব। এমন একটি ব্যবস্থা করা যায় যে, আইডি কার্ড দেখিয়ে শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেবে, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

এর জন্য আমাদের টেলিটককে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সার্বিকভাবে কভিড মোকাবিলায় সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর