শিরোনাম
শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বগুড়ার ভয়ংকর বাঙালি নদী এখন মরা খাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার ভয়ংকর বাঙালি নদী এখন মরা খাল

বগুড়ার বাঙালি নদীর এক পাশে চর জেগেছে। আরেক পাশে কিছু পানিতে বেঁচে আছে কচুরিপানা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ায় বর্ষাকালের ভয়ংকর নদী বাঙালি গ্রীষ্মের শুরুতেই শুকিয়ে গেছে। পানি না থাকায় নদীর তলদেশে সূর্যের আলোতে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আবার কোথাও সামান্য পানিতে মরা খালের মতো কোনোমতে বেঁচে আছে কচুরিপানা। অথচ বর্ষাকালে এ নদী ভরে ফুলেফেপে দুই পাড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। বন্যার সৃষ্টি হয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি করে থাকে। সেই নদী এখন ধান চাষের উপযোগী হয়ে আছে। জানা যায়, বাঙালি জাতির নামে বাংলাদেশের একমাত্র নদী বাঙালি নদী। গাইবান্ধা জেলায় নদীটির উৎপত্তি হলেও বিশাল অংশজুড়ে অবস্থান বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায়। স্রোতস্বিনী উত্তাল নদীটি একসময় ছিল পূর্ব বগুড়ার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বড় বড় নৌকায় মহাজনরা তাদের মালপত্র আনা-নেওয়া করতেন নদী দিয়ে। নদীতে সারা বছর থাকত মাঝিমাল্লার উপস্থিতি। বাঙালি নদীর বড় বড় বোয়াল, রুই ও কাতলা মাছের আলাদা স্বাদের জন্য কদর ছিল সর্ব মহলে। দলবেঁধে ছেলেমেয়েরা দুরন্তপনা করত এ নদীতে। প্রতি বছর হতো আকর্ষণীয় নৌকা বাইচ। যমুনা নদীটি বাঙালি নদীর খুব কাছাকাছি হওয়ায় বাঙালি নদীটিও বর্ষাকালে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। বর্তমানে নদীটিতে পানি খুব বেশি নেই। নেই কোনো ঢেউ, নেই মহাজনী নৌকার চলাচল। অধিকাংশ স্থানে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও পানি দেখা গেলেও কচুরিপানা ও শ্যাওলা, জঙ্গলে নদী তলদেশ ভরা। পানি না থাকায় বাঙালি নদীর বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে জেগে ওঠা নদী চরে এখন হচ্ছে চাষাবাদ। সামান্য জলপ্রবাহ থাকলেও হেঁটেই পার হওয়া যায় এপাড় থেকে ওপাড়।

তলদেশ পূরণ হয়ে এখন নদীটি তার অস্তিত্বই হারাতে বসেছে। নদী তীরবর্তী বিশ্বনাথপুর, চরমধুপুর, মধুপুর থেকে সোনাতলায় নদীর শেষ সীমানা পর্যন্ত চোখে পড়ে সবুজ ধানখেত। সর্বত্রই চলছে ফসলের যত্নআত্তি। নদীর দু-একটি স্থানে পানি দেখা গেলেও সেখানে জমে আছে কচুরিপানা। আর এ শুষ্ক মৌসুমে নদীর বেশির ভাগ অংশে চর জেগে গরু চারণভূমির পাশাপাশি ধান চাষের জমিতে রূপান্তর হয়ে আছে। নদীপারের মানুষগুলো নিজের পরিবারের ময়লা ফেলে নদীকে করছে আরও দূষণ।  বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, নদীতে এক সময় বড় বড় নৌকা চলত। গ্রীষ্ম-বর্ষা দুই মৌসুমেই পানি থাকত।

এখন বর্ষাকালে পানি হলে বন্যা আর ভাঙন এবং গ্রীষ্মকালে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ধানচাষ হয়ে থাকে। সোনাতলা উপজেলার সংস্কৃতিকর্মী প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন জানান, বর্ষকালে নদীতে ভয়াবহ বন্যা হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। দীর্ঘদিন নদী খনন না হওয়ায় নদীগুলোর তলদেশ পূরণ হওয়ার কারণে গতি হারিয়েছে। পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। খননের মাধ্যমে বাঙালি নদীর মতো এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলোর জীবন ফিরিয়ে আনতে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর তলদেশ খনন করা গেলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি পাওয়া যাবে। কৃষি কাজের জন্যও এ নদী দীর্ঘসময় ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। বর্ষকালে নদীটি আবার ভয়ংকর হয়ে যায়। বাঙালি নদীর তলদেশ খননে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানো হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর