সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু নিয়ে আবারও শঙ্কা

মশার উৎপাতে নাজেহাল নগরবাসী

শামীম আহমেদ

ডেঙ্গু নিয়ে আবারও শঙ্কা

ঝড়-বৃষ্টি, দুই সিটির মশক নিধন অভিযান, কোটি টাকা খরচ করে কেনা নতুন কীটনাশক; কিছুতেই কমছে না ঢাকার মশা। গত ২২ এপ্রিল রাতে ঝড়ে মশার প্রকোপ কিছুটা কমলেও দুই দিনের মধ্যে আবারও যেন রাজধানী দখলে নিয়েছে খুদে প্রাণীটি। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। শান্তিতে করা যাচ্ছে না ইফতার বা সাহরি। সন্ধ্যার পর বাইরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মিলছে না মুক্তি। কাউকে বাসায় ঢোকাতে দরজা খুললে মুহূর্তের মধ্যে অগণিত মশা ঢুকে পড়ছে ঘরে। মশার কারণে গত কয়েক মাস ধরে বিতর্কের মুখে থাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এখনো যেন ঝড়-বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে আছে। ২০১৯ সালে এডিস মশার কারণে রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নেয় ডেঙ্গু। অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শপথ অনুষ্ঠানে দুই মেয়রকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘মশা আপনাদের ভোট যেন খেয়ে না ফেলে?’ অথচ, বছর না ঘুরতেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ঢাকাবাসী। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে মশার উপদ্রব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এ নিয়ে বিতর্কের মুখে ৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) মেয়র দুই সপ্তাহের মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) মেয়রও বিভিন্ন স্থানে মশক নিধন অভিযানে গিয়ে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। তবে মার্চ মাসজুড়ে তা-ব চালিয়েছে মশা। এপ্রিলে মশা কিছুটা কমলেও এখনো সন্ধ্যার পর ঘরে-বাইরে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা দায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে এখন কিউলেক্স মশা কমতে থাকবে, তবে এডিস মশা বাড়বে। তাই এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এদিকে দুই সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হওয়ায় খোদ নগরবাসী মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন। মশারি, কয়েল, অ্যারোসল স্প্রে, ধুপ, মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট, ইলেকট্রিক আলোর ফাঁদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে মশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে ডিএনসিসি ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তারিকুল ইসলাম বলেন, গরমের মধ্যেও দিন-রাত দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তার পরও মশা কোথা থেকে ঢুকে পড়ে বুঝি না। বন্ধ ঘরেই কয়েল জ্বালিয়ে রাখি। শান্তিতে সাহরি ও ইফতার করতে পারি না। তবে দুই সিটি করপোরেশন বলছে, লকডাউনেও তাদের মশা মারা অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের গতকাল বলেন, লকডাউনের আগেই ১৫ দিনের ওষুধ সব অঞ্চলে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযান চলছে। মশাও কমেছে। উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, মশা নিধনে মার্চে সব ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলেছে। এখনো নিয়মিত অভিযান চলছে। এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, গত মার্চের তুলনায় চলতি এপ্রিলে ঢাকায় মশার ঘনত্ব কিছুটা কমলেও এখনো প্রতি ডিপে (মশার ঘনত্ব বের করার পরিমাপক) গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। অথচ গত জানুয়ারির আগে ছিল ১৫ থেকে ২০টি। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মশার উৎপাত অন্য এলাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

এ ব্যাপারে ড. কবিরুল বাশার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হঠাৎ গরম পড়ায় একযোগে অনেক ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ায় ফেব্রুয়ারি-মার্চে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতি ডিপে মশার ঘনত্ব ছিল ৬০টির বেশি। এখন ৩০-৩৫টি। ঝড়-বৃষ্টি, মশক নিধন অভিযান ও তাপমাত্রার পরিবর্তনে মশা কিছুটা কমেছে। প্রাকৃতিকভাবেই এখন কিউলেক্স মশা কমতে থাকবে। ডিসেম্বর পর্যন্ত কমবে। তবে এখন এডিস মশা বাড়বে। জুলাই-আগস্টে এডিস মশা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। মশার উপদ্রব কমাতে ফগিং করে তেমন ফল মিলবে না। লার্ভি সাইডিং করতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকার সব জায়গায় মশার ঘনত্ব সমান না। উত্তরা, দিয়াবাড়ি, ঝিলপাড়, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি, বসিলা, শ্যামপুর, পোস্তগোলাসহ কিছু এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। যেসব এলাকায় পচা ডোবা বেশি, সেখানে কিউলেক্স মশা বেশি। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর