অনিয়ম, দুর্নীতিসহ উৎকোচ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবন থেকে গোলপাতা উজাড় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে তারা গোলপাতা কুপের চাঁদপাই রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুপ কর্মকর্তার (সিও) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধ বন থেকেও গোলপাতা কাটা হয়েছে।
শরণখোলার উপজেলার গোলপাতা ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম তালুকদার, ফুল মিয়া আড়ৎদার, সেলিম বেপারী, মতিয়ার রহমান, জাকির হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, শরণখোলা রেঞ্জে গোলপাতার পারমিট বন্ধ হওয়ার পর থেকে তারা চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে পাতা আহরণ করে ব্যবসা করছেন। এ বছর ২৮ জানুয়ারি ও ২৮ ফেব্রুয়ারি দুই কিস্তিতে তাদের মতো সাতক্ষীরা, খুলনা, মোংলাসহ বিভিন্ন এলাকা ব্যবসায়ীরা কমপক্ষে ২০০ নৌকার গোলপাতা আহরণের পারমিট পান। এতে সব মিলিয়ে একেক কিস্তিতে নৌকাপ্রতি সরকারি রাজস্ব আসে পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা। অথচ তাদের কাছ থেকে পারমিট দেওয়ার সময় ২৮ হাজার, কুপ চেকিংয়ের নামে ২৬ হাজার, ভালো গোলবন (ঘের) দেওয়ার নামে ১৫ হাজার, বিএলসি বাবদ পাঁচ হাজার, ঘাট চেকিংয়ের নামে পাঁচ হাজার, সিটি কাটা (পারমিট হস্তান্তর) বাবদ দুই হাজার, অন্যান্য খরচের নামে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। কুপ কর্মকর্তা ওবায়দুল হক তার অফিসের বোটম্যান (বিএম) মিজানুর রহমানকে দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করেছেন। অতিরিক্ত টাকার ব্যাপারে কোনো ব্যবসায়ী প্রশ্ন তুললে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তাই লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে লোকসানের ভয়ে বাধ্য হয়ে তাদের নিয়মের অতিরিক্ত টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অনেক বাওয়ালী ক্ষতি পোষাতে ৫০০ মণের পারমিট নিয়ে নৌকায় অতিরিক্ত তক্তা জুড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মণ পাতা কেটেছে। কেউ কেউ গোলঝাড়ের ঠ্যাকপাতাসহ জ্বালানি কাঠও কেটেছে। চাঁদপাই রেঞ্জের ২ নম্বর কুপের যেসব এলাকার বন উজাড় করে গোলপাতা কাটা হয়েছে তার মধ্যে বেড়ির খাল, নন্দবালা, সিংড়াবুনিয়া, তাম্বলবুনিয়ার আগা, শান্তির খাল, কলামুলা, চাঁনমিয়ার খাল, আলকির খাল অন্যতম।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) এনামুল হক বলেন, ‘কিছু অনিয়মের কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে লিখিতভাবে কেউ জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’ বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গোলপাতার কুপ চলমান থাকাকালে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। মৌসুমের এক মাসের অধিক সময় পর এসব অভিযোগ এখন প্রমাণ করা কঠিন।’