শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

চিংড়ি উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা

উপকূলীয় এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার উপকূলীয় বটিয়াঘাটায় আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষে সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। প্রচলিত সনাতন পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে যেখানে চিংড়ির উৎপাদন ছিল ৩৫০-৪০০ কেজি। সেখানে আধা-নিবিড় চাষে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৭০০০-৮০০০ কেজি।

মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নত মানের পোনা সংগ্রহ, ঘেরে পানির ঘনত্ব বেশি ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় চিংড়ির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। সেই সঙ্গে দামও তুলনামূলক বেশি পাওয়ায় খুশি চাষিরা।

জানা যায়, দেশের হিমায়িত মৎস্য রপ্তানির সিংহভাগ চিংড়ি। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানা কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় চিংড়ির প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো পড়েছে সংকটে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চিংড়িতে উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)-এর তথ্য মতে, দেশে ১১০টি চিংড়ি কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ৮০ শতাংশই অব্যবহৃত থাকছে। ফলে মাঠপর্যায়ে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেছে মৎস্য বিভাগ। এরই মধ্যে খুলনার বটিয়াঘাটা খলসিবুনিয়ায় পরীক্ষামূলক আধা-নিবিড় চাষে বাগদা উৎপাদন বেড়েছে ২০ গুণ। জানা যায়, এখানে ৬০ শতকের  ঘেরে গত বছর যেখানে ৪৩ মণ চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল, এবার সেখানে চিংড়ি হয়েছে ৫২ মণ। পাশাপাশি আকারে বড় হওয়ায় ৮০০ টাকা কেজি গ্রেডের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা কেজি দরে। রপ্তানিতে চাহিদা থাকায় সরাসরি ঘেরে এসেই চিংড়ি সংগ্রহ করছেন কারখানার প্রতিনিধিরা।

কারখানায় চিংড়ি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খুলনার রূপসার মায়ের দোয়া ফিশের স্বত্বাধিকারী মো. টিংকু জানান, এবার চিংড়ি কম সময়ে আকারে বড় হয়েছে। ফলে গত বছর যে চিংড়ির কেজি ৮০০ টাকা ছিল এখন তা ঘেরে বসেই ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার সার্বিক অবস্থা, গুণাগুণ ও পরিবেশগত বিষয় নিয়ে কাজ করছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, উন্নত জাতের পোনা, ঘেরে তলানিতে জমাকৃত জৈব পদার্থ পরিষ্কার (বটম ক্লিন), পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ও উন্নত খাবার সরবরাহে আধা-নিবিড় চাষে বিপ্লব ঘটেছে। তিনি বলেন, ঘেরে চারপাশে বাঁশের বেড়া ও ছোট ফাঁসের লাইলন জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, যাতে বাইরে থেকে জীব-জন্তু ঘেরে ঢুকতে না পারে। এই চাষ পদ্ধতিতে ছড়িয়ে দিতে পারলে চিংড়ি উৎপাদন বহুগুণ বাড়বে।

এদিকে উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি চাষে রাস্তাঘাট, অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। অবকাঠামো উন্নত হলে দ্রুত পোনা সংগ্রহ ও উৎপাদিত চিংড়ি পরিবহন করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর