ছিনতাইয়ে উচ্চবিত্তের সন্তানরা

রাজশাহী নগরীজুড়ে আবার বেড়েছে ছিনতাই। প্রতিদিনই শহরের কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ঈদের পর ছিনতাই বেড়েছে। সবশেষ গত মঙ্গলবার ২৩ লাখ টাকা খুইয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মনে করছেন, জেলে থাকা কিছু ছিনতাইকারী ঈদের আগে জামিন পেয়েছে। তারা আবার ছিনতাই শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরে এখন সাধারণত দুইভাবে ছিনতাই হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের একটা অংশ দিনে-রাতে মহল্লার অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করছে। ছিনতাইকারীদের আরেকটি অংশ মোটরসাইকেল নিয়ে পথচারী কিংবা রিকশার যাত্রীর হাতে থাকা ব্যাগ টান দিয়ে ছুটে পালাচ্ছে। এদের টার্গেট সাধারণত নারীরা। পুলিশ বলছে, মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য মাদকসেবীরা এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। শহরে নতুন ছিনতাইকারী কম। ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিরা বারবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এ জন্য তাদের ধরে জেলে ঢোকানো হয়। এবার ঈদ নির্বিঘ্ন করতে ঈদের আগেও এ ধরনের অভিযান জোরদার ছিল। তখন বেশ কিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ঈদের আগে আবার কিছু ছিনতাইকারী আদালত থেকে জামিন পেয়ে বের হয়েছে। তারা এখন ছিনতাই করছে। তাদের খুঁজে গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। ৮ মে সন্ধ্যার পর নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় এক নারী হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন এক ছিনতাইকারী বাইক নিয়ে এসে জনবহুল ওই স্থানেই সেই নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দেয়। এ সময় স্থানীয়রা ধরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ তার মোটরসাইকেলটিও জব্দ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছিনতাইকারীর নাম ফায়সাল রহমান (৩৬)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় তার বাড়ি। বিবিএর ছাত্র ফায়সালের মা একজন স্কুলশিক্ষক। বাবা শিক্ষা কর্মকর্তা। মাদকের টাকা জোগাড়ে ফায়সাল রাজশাহী এসেছিলেন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। ধরা পড়ার আগে একই দিনে ফায়সাল আরও তিনটি ছিনতাই করেন। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৩০০ টাকা ও কয়েকটি মোবাইল ফোন পান। জিরোপয়েন্টে ধরা পড়ার সময় এসব তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন মামলা করে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। নগরীতে মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে ছিনতাই করতেন অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক রাইহানুল ইসলামের ছেলে ইয়াসির আরাফাত। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যে মিম ও শাওন নামের আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। ইয়াসির আরাফাত আগেও ছিনতাই করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মজিবর রহমান গত মঙ্গলবার জিপিও থেকে স্থায়ী আমানতের ২৩ লাখ টাকা তোলেন। তারপর টাকার ব্যাগ নিয়ে নগরীর বাটার মোড়ে জুতার শোরুমে ঢুকে জুতা পছন্দ করছিলেন। পাশে ব্যাগটি রেখে মজিবর রহমান ও তার স্ত্রী জুতা দেখছিলেন। তখনই এক ছিনতাইকারী তার ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেন। দোকানি তাকে ধাওয়া দিয়েও ধরতে পারেননি। রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহী শহরে যারা ছিনতাই করে, তারা চিহ্নিত। বারবার একই ব্যক্তিরা ছিনতাইয়ে জড়ায়। তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত। একেকজনের বিরুদ্ধে পাঁচ-ছয়টি করে ছিনতাইয়ের মামলা আছে। এদের আইনের আওতায় এনে শহরে ছিনতাই কমানোর চেষ্টা চলছে।