শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ছায়ানটের বর্ষাবরণ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

ছায়ানটের বর্ষাবরণ

নৃত্যের মুদ্রা, গানের সুর ও আবৃত্তির দীপ্ত উচ্চারণে বর্ষাবরণ করেছে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। শিল্পীদের পরিবেশনার পরতে পরতে ছিল বর্ষাকে অভিবাদন ও বরণের ব্যাকুলতা। গতকাল সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনের এ আয়োজনের শুরুতেই দ্রোহ, প্রেম, চেতনার কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বাজে মৃদঙ্গ বরষা’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিল্পীরা। এরপর শিল্পীরা কবির আরেকটি গান ‘রিম ঝিম রিম? ঝিম বরষা এলো’-এর সঙ্গে আরেকটি দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে আরও পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথের ‘নীল অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায়’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য। এতে একক গান পরিবেশন করেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, কানিজ হুসনা আহম্মাদী, সুমন মজুমদার, লায়েকা বশীর, তাহমিদ ওয়াসিফ ঋভু, রেজাউল করিম, অভয়া দত্ত, খায়রুল আনাম শাকিল, সুতপা সাহা, শুক্লা পাল সেতু, শারমিন সাথী ইসলাম প্রমুখ। আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে, প্রবল ঘন মেঘ আজি, বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখিপাতে, আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, কে গো গাহিলে পথে ‘এসো পথে’ বলিয়া, রুম ঝুম বাদল আজি বরষে, মেঘের ডমরু ঘন বাজে, ঝর ঝর ঝরে শাওন ধারা, দোলে বন-তমালের ঝুলনাতে ইত্যাদি গানের সুরে শ্রাবণের সন্ধ্যায় বর্ষা মূর্ত হয়ে ওঠে গোটা মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে ‘ওই মালতীলতা দোলে’ গানের সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করেন কৃষ্ণা রায়। রবীন্দ্রনাথের এসো এসো ওগো শ্যামছায়াঘন দিনে এসো শ্যামলসুন্দর গানের সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা তাথৈ। ‘আজি হৃদয় আমার’ গানের সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করে মেঘমালা মেঘশ্রী রহমান ও সূর্যিমালা সুরশ্রী রহমান। একক পাঠ ও আবৃত্তিতে অংশ নেন কাজী মদিনা ও মাহমুদা আখতার। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে আসরের সমাপ্তি ঘটে।

আমরা কুঁড়ির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও কেক কাটার মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর উদযাপন করেছে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন আমরা কুঁড়ি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। শিশুদের কলকাকলি ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যদিয়ে কেক কেটে আয়োজনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন। সংগঠনের চেয়ারম্যান মুশতাক আহম্মদ লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম, সংগঠনের উপদেষ্টা মোসলেম উদ্দিন হাওলাদার, রফিকুল ইসলাম কাঞ্চন, কাইয়ুম হোসেন ও মহাসচিব ফেরদৌস আরা বন্যা। এরপর সাংস্কৃতিক  পর্বে দলীয় সংগীত, একক সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন সংগঠনের সদস্যরা।

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ : দেশজুড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন, নিপীড়ন, লাঞ্ছনা এবং বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তিন দিনের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মঞ্চ’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ।  এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ কয়েকটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন। ‘শিক্ষা-সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব রক্ষায় রুখো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত সমাবেশের শুরুতে দুটি দলীয় গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন, ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের, এ মাটি মানবতার’ এবং ‘এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে’ গান দুটি। আরও গণসংগীত পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের বড় ও ছোটদের দল, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আবৃত্তি করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনু, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের আলী আহমেদ নান্টু, জাহিদ মোস্তফা, সুমন সরদার, আনোয়ার কামাল, স. ম. কামাল, রেজওয়ানুল করিম সুমন। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর বাচিক শিল্পীরা। এরপর সমসাময়িক বিষয়ের ওপর নির্মিত পথনাটক পরিবেশন করে প্রাচ্যনাট। নৃত্য পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী পথনাটক ‘অজ্ঞাতনামা’ পরিবেশন করে উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ। এ ছাড়া, অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা সময় রং-তুলিতে প্রতিবাদ শিরোনামে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কনে অংশগ্রহণ করেন চিত্রশিল্পী জাহিম মোস্তফা, রাশেদুল হুদা, কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, সোহাগ বায়েজিদ, টাইগার নাজির এবং সনাতন মালো। প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এর আগে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বক্তৃতা করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জাকির হোসেন, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের রঘু অভিজিৎ রায়, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের শফিকুর রহমান শহীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, প্রগতি লেখক সংঘের সহসভাপতি শামসুজ্জামান হীরা এবং কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসন মাহফুজা খানম।

 বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই কৌশল অবলম্বন করে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার ভুয়া অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই অপরাধীরা একই কৌশল অবলম্বন করলেও সে কৌশল ঠেকাতে বারবারই ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের এসব অপকর্মের সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অধিকাংশ অপরাধের ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে। শুধু হিন্দু বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতনই নয়, গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনা, নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনাও। নারায়ণগঞ্জের শ্যামল কান্তি ভক্ত থেকে শুরু করে নওগাঁর আমোদিনী পাল, মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল, নড়াইলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বা আশুলিয়ার কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার পর্যন্ত একের পর এক শিক্ষক লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকারও হচ্ছেন। গত কয়েক বছরে এতগুলো অমানবিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হলেও, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবিদার সরকার ক্ষমতায় থেকেও সেসব ঘটনার কোনোটিরই সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করতে পারেনি। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর বা যশোরের মালোপাড়া, সুনামগঞ্জের শাল্লা, কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড় বা সম্প্রতি নড়াইলের লোহাগড়ায় যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতর ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটিরই প্রকৃত অপরাধী আজও ধরা পড়েনি।

তিন দিনের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ছাড়াও কয়েকটি জেলায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আজও কয়েকটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। কাল শেষ দিন ঢাকায় সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

আরণ্যকের ‘রাজনেত্র’ : ‘রাজনেত্র’ নামে মঞ্চে নতুন নাটক এনেছে শীর্ষস্থানীয় নাটকের দল আরণ্যক। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এটি দলের ৬৪তম প্রযোজনার প্রথম মঞ্চায়ন। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন হারুন রশীদ। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন দলের নিয়মিত নাট্যকর্মীরা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর