মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনা দুর্ভোগে রোগীরা

দালালের খপ্পরে স্বাস্থ্যসেবা

সক্ষমতা আছে তবু টেস্ট প্রাইভেট প্যাথলজিতে!

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালকে ঘিরে প্যাথলজি পরীক্ষা, ওষুধ ক্রয়, রোগীর পথ্য সরবরাহ, দালাল চক্র, ইউনিটভিত্তিক ডিউটি বণ্টন বাণিজ্য (রোস্টার)-সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও জড়িয়ে পড়েছেন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে। জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও কমিশনের মাধ্যমে সাধারণ রোগীদের ওইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। আর অধিক টাকার বিনিময়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদের। এ ছাড়া অব্যবস্থাপনা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। গতকাল সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ওয়ার্ড (৭ ও ৮) থেকে প্যাথলজি বিভাগে যেতে বারান্দায় দুই স্থানে এসির পাইপ ফেটে পানিতে রোগীর বিছানা-বালিশ ভিজে গেছে। রোগীর স্বজনরা বালতি, মগ ও বিছানার কাপড় দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর পিতা আলমগীর মল্লিক জানান, তার ছেলে গত এক সপ্তাহ ধরে পেটের ব্যথায় ছটফট করছে। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা বেশ কয়েকটি মেডিকেল টেস্ট দিয়েছেন। যার মধ্যে সামান্য রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, করোনা পরীক্ষাও দালালের মাধ্যমে হাসপাতালের সামনের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে হয়েছে।

একইভাবে স্ট্রোকজনিত অসুস্থতায় ভর্তি দুল মলোতা বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থা নির্ণয়ে ট্রপোনিন-ওয়ান, ক্রিয়েটিনিনসহ সব ধরনের পরীক্ষা বেসরকারি জেনারেল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে করানো হয়েছে। স্বজনরা জানান, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ওই প্রতিষ্ঠানের মোবাইল নম্বর দিয়ে সেখান থেকে এসব পরীক্ষা করাতে বলেছেন। তবে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ জানিয়েছে, রি-এজেন্ট সংকটের কারণে দু-একটি পরীক্ষা ছাড়া সব মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ‘দ্রুত ও ভালো মানের পরীক্ষার’ প্রলোভনে সাধারণ রোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে দালাল চক্রের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। তারা ভালো চিকিৎসার নামে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। সরকারি এই হাসপাতালের ওপর ভিত্তি করে এখানে দুই ডজনের বেশি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। ২০২১ সালে র‌্যাবের অভিযানে হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নির্দিষ্ট সেবা প্রদানের তথ্য বোর্ডটি ২৮ জুলাইয়ের পর আপডেট করা হয়নি। নিচতলায় বাথরুম, জরুরি বিভাগের সামনে হাত ধোয়ার স্থানে নোংরা টয়লেট পেপার, ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। দোতলার কর্তব্যরত সেবিকার কক্ষে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বালতি, চেয়ার, টাইলসের জিনিসপত্র। কক্ষে কেউ না থাকলেও ফ্যান-লাইট সবই চলছে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তরে দালাল তৎপরতা বন্ধে অভিযান চালানো হবে। এ ছাড়া বছরের শুরুতে ঠিকাদারের মাধ্যমে রি-এজেন্ট সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত চাপে পরীক্ষায় ব্যবহৃত রি-এজেন্ট সংকট তৈরি হয়। তবে এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর