বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহত্যায়

নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করে মোটিভেশনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহত্যায়

খুলনায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে অপমৃত্যু ঘটনার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আত্মহত্যা। গত ৩ বছরে খুলনায় ১৭৩৩টি অপমৃত্যুর ঘটনার মধ্যে ১০৩৬টি ছিল আত্মহত্যা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছে। একাকিত্ব, অভিমান, পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকা, প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ও পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, গতকাল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার (২৪) বঁটি দিয়ে নিজে গলায় আঘাত করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। ক্যাম্পাসে অপরাজিতা ছাত্রী হলে এ ঘটনা ঘটে। এতে তার গলার মাঝখানে কেটে গেছে। আহত অবস্থায় তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এর আগে ২৩ জুন মা-বাবার উদ্দেশে ‘চিরকুট’ লিখে আত্মহত্যা করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজির শিক্ষার্থী প্রমিজ নাগ (২৪)। তিনি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ও পিরোজপুর নাজিরপুরের জ্যোতির্ময় নাগের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী এক তরুণী তাকে ৩০ হাজার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলার পর পুলিশ তরুণীকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া ৫ জুন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাজল মন্ডল ও ৪ এপ্রিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অন্তু রায় (২১) আত্মহত্যা করেন। ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর কুয়েট শিক্ষার্থী সুব্রত কুমার ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরদিন ১৮ নভেম্বর সাভারে বেড়াতে গিয়ে কুয়েট শিক্ষার্থী সবুজ মন্ডল আত্মহত্যা করেন। ৩ ডিসেম্বর আরেক শিক্ষার্থী তাহমিদুল ইশরাক আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।

মহিলা অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক হাসনা হেনা বলেন, পরিবারে মা-বাবার ব্যস্ততায় সন্তান একাকিত্বে ভোগে। ফেসবুক মোবাইল অতিরিক্ত ব্যবহারে ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে ওঠে না। ফলে একটা ঘটনা ঘটলে নিজেদের সামলাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সরকারি সুন্দরবন কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, বিভিন্ন ধরনের হতাশা বোধ ও বিষণ্ণতা থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। অপসংস্কৃতি চর্চা, বিদেশি কালচারে গা ভাসাতে গিয়ে হতাশা বোধ ও বিষণ্ণতা তৈরি হয়। আত্মহত্যাকারী নিজেকে পৃথিবীতে অর্থহীন মনে করেন। তিনি এ ক্ষেত্রে নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করে মোটিভেশনের দাবি জানান। বিশ্লেষকরা বলছেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে সামাজিক সচেতনতা দক্ষতা বাড়াতে হবে। কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর