সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ওঁরাওদের কারাম উৎসব জমেছিল নাচে-গানে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ওঁরাওদের কারাম উৎসব জমেছিল নাচে-গানে

এভাবেই ভাদ্র মাসের একাদশীতে নেচে-গেয়ে কারাম উৎসবে মেতে ওঠেন ঠাকুরগাঁওয়ের ওঁরাও সম্প্রদায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রাম জমে উঠেছিল নাচে-গানে। গত শনিবার রাত ছিল ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসবের সময়। উৎসব উদযাপন করতে ওই গ্রামের ওঁরাও সম্প্রদায়ের পাশাপাশি জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলিত হয়েছিলেন সব শ্রেণির মানুষ। তারা মাদল ঢোল করতাল আর ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে মাতিয়ে তোলেন গোটা এলাকা। প্রতি বছরের ভাদ্র মাসের একাদশীতে এই কারাম উৎসব উদযাপন করেন ঠাকুরগাঁওয়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। উৎসবের মধ্য দিয়ে কামনা করা হয় সব বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি এবং মঙ্গল। প্রতি বছরের মতো এবারও কারাম উৎসবে অংশ নিতে বাদ্যের তালে তালে দল বেঁধে মানুষ ছুটে এসেছিলেন দূর-দূরান্ত থেকে। উৎসব সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎসব উদযাপনের জন্য ওঁরাও নর-নারীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূজার কর্মসূচি পালন করেন।

সে অনুযায়ী, শনিবার ভোররাত থেকে সারা দিনের জন্য তারা উপোস করেছেন। সেই সঙ্গে পূজা করেছেন, মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেছেন। সন্ধ্যায় তারা মাদল ঢোল, করতাল ও ঝুমকির তালে তালে নেচে-গেয়ে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলতে যান। পরে পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে যাওয়া মাত্রই কারামগাছের ডাল পূজার বেদিতে রোপণ করেন।

এরপরেই শুরু হয় রাতের উৎসব। ওঁরাও সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে সব শ্রেণির মানুষ শামিল হন নৃত্য উৎসবে। সারা রাত চলে এ উৎসব।

উৎসবে অংশ নেওয়া এক তরুণ সোহেল লাখরা বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর এ উৎসব পালন করি। উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করি। আমাদের নিজেদের বিপদ থেকে মুক্তিসহ দেশের সব মানুষের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করি।’ সুশীলা লাখরা নামে আরেকজন বলেন, ‘এটি আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবে আমরা অনেক আনন্দ করে থাকি। আমাদের সবার বাড়িতে মেহমান আসেন। আমরা নেচে-গেয়ে কারাম পূজা পালন করে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করি।’

কারাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ কেরকেটা বলেন, আদিকাল থেকে আমরা কারাম উৎসব উদযাপন করে আসছি। কারাম বৃক্ষকে পূজা করার মাধ্যমে আমরা মনে করি আমাদের সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। এ পূজার মাধ্যমে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, কারাম উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী এবং বড় উৎসব। প্রতি বছর তারা নানা আয়োজনে এ উৎসব উদযাপন করেন। তাদের সব আয়োজনে জেলা প্রশাসন সঙ্গে থাকে এবং আছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর