প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেন। এর ছয় বছর পর ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি রুটে পাইলট কার্যক্রম উদ্বোধন করে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। একটি রুটে উদ্বোধনের ১০ মাস পর নতুন আরও দুই রুটে উদ্বোধন হচ্ছে আজ। পরিবহনে শৃঙ্খলার এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে নানা সমস্যা ও সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ কারণে এতে ধীরগতি বলে জানিয়েছেন কমিটি -সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, রাজধানীর নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। ৩৮৬টি রুটে বিশৃঙ্খলভাবে এসব বাস চলছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় গণপরিবহন মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যদুর্ঘটনা ও হতাহত নগরজীবন বিষিয়ে তুলেছে। এ থেকে পরিত্রাণ দিতে ২০১৫ সালে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে রাজধানীর ৩৮৬ রুট নেমে আসবে ৪২টিতে। আর ৩০০ বাস কোম্পানিকে নামিয়ে আনা হবে ২২টিতে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর কিছুদিন এ উদ্যোগ থমকে ছিল। ২০১৮ সালের জুলাই-আগস্টে নিরাপদ সড়ক দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি কয়েকটি সভা করে ঢাকায় বিআরটিসির বাস চালু করে। তবে উদ্যোগ সফলতা বয়ে আনতে পারেনি। এরপর ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে-কাঁচপুর পর্যন্ত রুটে পাইলট প্রকল্প নগর পরিবহন বাস সার্ভিস চালু করে। এ রুটে ১০০ বাস চলাচলের কথা ছিল। তবে ৫০টি বাস দিয়ে পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে ১০০ বাসে উন্নীত করা হবে। কিন্তু এখনো সেই ৫০ বাস দিয়ে চলছে নগর পরিবহন। এ রুটে বিআরটিসির ৩০টি দ্বিতল বাস ও ট্রান্স সিলভার ২০টি বাস চলছে। আরও তিনটি রুটে পরীক্ষামূলকভাবে বাস চলাচল করার ঘোষণা দিয়েছে রেশনালাইজেশন কমিটি। কিন্তু বাস সংকটে ২৩ নম্বর রুটে চালু হবে না। আজ বেলা ১১টায় বসিলা যাত্রীছাউনি-সংলগ্ন স্থানে দুই রুটের বাস উদ্বোধন করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বাস রুটগুলোয় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত ও বাস চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ৭০টি বাস স্টপেজ, চারটি বাস ডিপো-টার্মিনাল ও একটি লে-ওভার টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান।
ধীরগতির কারণ হিসেবে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য ড. সালেহ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথমত আমাদের গণপরিবহনে শৃঙ্খলার উদ্যোগ আগে কখনো নেওয়া হয়নি। এতে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে নানা সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম পরিবহন পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহারের কোনো নীতিমালা ছিল না। আমরা নতুন করে সব তৈরি করছি। রাজধানীতে সড়ক রয়েছে ৮ শতাংশ।
অথচ আদর্শ রাজধানীতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা। তা-ও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া পার্কিং স্পেস সংকট, টার্মিনাল ও যাত্রীছাউনি নেই। একই সঙ্গে একটা বাস ডিপো তৈরি হয়নি রাজধানীতে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে বাস উৎপাদন হয় না। আমরা আমদানিনির্ভর। তবে দেশে গাড়ির বডি তৈরি করা হয়। সেখানেও কারিগরি দিক দিয়ে একটু পিছিয়ে আছি। সেই সঙ্গে অর্থেরও সমস্যা আছে। আমরা যদি নতুন গাড়ি আমদানি করতে যাই তাহলে একটা গাড়ির দাম পড়বে ৪০-৪২ লাখ টাকা। আর যদি বডি ছাড়া গাড়ি এনে দেশে তৈরি করি তাহলে দাম পড়বে ৩০-৩২ লাখ টাকা। সরকারের আর্থিক বিবেচনায় সেভ করতে হচ্ছে। আর আমরা চাইলে এক মাসে ১০০ গাড়ির বডি তৈরি করতে পারি না। এসব কারণে আমাদের কার্যক্রমের গতি কিছুটা কম।’
এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, নতুন দুই রুটে নগর পরিবহন চালু হওয়ার পর অন্য পরিবহনগুলো আর চলতে পারবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, ২২ নম্বর রুটের বাসগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। এ রুটে ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদ গেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, টিকাটুলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কোনাপাড়া হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার সড়কে চলবে। তিনি বলেন, ২৬ নম্বর রুটের বিআরটিসির বাসগুলো একেবারে নতুন না হলেও ২০১৯ সালের পরে কেনা ৫০টি বাস দিয়ে চালু করা হবে। প্রতিটি বাসে ড্রাইভারসহ ৭৫টি আসন রয়েছে।