শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটের রাজনীতিতে হঠাৎ উত্তাপ

একটি খুন ঘিরে মুখোমুখি আওয়ামী লীগ-বিএনপি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের রাজনীতিতে হঠাৎ উত্তাপ

হঠাৎই বদলে যেতে শুরু করেছে সিলেটের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। একটি খুনের ঘটনা কেন্দ্র করে উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতির ময়দানে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্রমেই মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাচ্ছে। বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা করছে আওয়ামী লীগ। এসব ‘ষড়যন্ত্র’ প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে বিএনপি। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সামনে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে যেতে পারে বলে শঙ্কা আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিলেটের রাজনীতি সবসময়ই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। সম্প্রীতির সুবাতাস সবসময়ই এখানে বজায় থাকে। তবে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে যে বৈরী মনোভাব বিরাজমান, এর রেশ এখন লাগছে সিলেটেও। তাদের মতে, বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল খুনের ঘটনাই সিলেটের রাজনৈতিক মোড় অনেকটা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার পরম্পরায় যেসব ঘটছে, তা এখানকার রাজনীতির ময়দানের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জানা গেছে, আ ফ ম কামাল ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। এর আগে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ও ল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রবিবার রাতে নগরীর আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় খুন হন কামাল। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী আজিজুর রহমান সম্রাটকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নামোল্লেখসহ হত্যা মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন তিন আসামি। কামাল খুনের কথা ছড়িয়ে পড়লে সেদিন রাতে রাজপথে নেমে আসেন বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা নগরীতে কয়েক দফা বিক্ষোভ করেন। তাদের বিক্ষোভ থেকে চৌহাট্টা ও রিকাবীবাজারে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিল। এ হত্যাকাে র জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীনদের দায়ী করা হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিক্ষোভের খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনও পাল্টা বিক্ষোভ বের করে নগরীতে। তখন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানার-ফেস্টুন, বিলবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। বিক্ষোভ থেকে বিএনপিবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত আওয়ামী লীগের ব্যানার-ফেস্টুন ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ চার ছাত্রদল নেতাকে সোমবার গ্রেফতার করে। পরদিন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠায়। এদিকে ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে সিলেট বিএনপির আড়াই শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে আওয়ামী লীগ। মামলার বাদী মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাহিদ সারওয়ার। মামলায় কোনো নেতা-কর্মীর নামোল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মামলা করেছে। যারা ভাঙচুর করেছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’ এদিকে, শুধু মামলাই নয়, বিএনপিকে ‘সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

আরও দুজন গ্রেফতার : সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যা মামলায় মিশু (২৬) ও মনা (২৫) নামে আরও দুই আসামি গ্রেফতার হয়েছে। সুনামগঞ্জ থেকে র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করে। আসামি মিশু সিলেটের বিমানবন্দর থানার বাদামবাগিচা আবাসিক এলাকার মাসুকের ছেলে ও মনা গোয়াইপাড়ার মৃত নুর মিয়ার ছেলে। এর আগে মঙ্গলবার কুটি মিয়া নামে আরেক আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। র‌্যাব-৯-এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি আফসান আল আলম বলেন, বুধবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ থানার নুরপুর থেকে মিশু ও মনাকে গ্রেফতার করা হয়।

 প্রসঙ্গত, ৬ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামালকে কয়েকজন যুবক ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মঈনুল হক বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পুলিশ বলছে, বিদেশে লোক পাঠানোর টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১৯ অক্টোবর নগরীর আম্বরখানায় আ ফ ম কামাল ছুরিকাঘাত করেন সম্রাটকে।

এর প্রতিশোধ নিতে সম্রাট সহযোগীদের নিয়ে কামালকে ছুরিকাঘাত করেন। সম্রাট এখনো পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে র‌্যাব ও পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর