বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

২৪ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি চুরি হওয়া নবজাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে ২৪ ঘণ্টায়ও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। সন্তান হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন মা রানিমা বেগম। চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে তার। জন্ম নেওয়ার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা শিশুটি মায়ের কাছে ছিল। সেই সন্তান ছাড়া কীভাবে বাড়ি ফিরবেন রানিমা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জানা যায়, মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এই নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটে। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবারটির নির্ঘুম রাত কেটেছে হাসপাতালের বারান্দায়।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বাগেরহাটের ফকিরহাটের তুরাব আলীর স্ত্রী রানিমা হাসপাতালে ভর্তি হন। দুপুরের দিকেই তার সুস্থ বাচ্চা জন্ম নেয়। বিকাল ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। শিশুটির পিতা তুরাব আলী ফকিরহাটে বাড়িতে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জড়ো হয়ে তুরাব আলীসহ পরিবারের কয়েকজনকে মারপিট করে। নবজাতকটি তখন ছিল তার খালার কোলে। মারপিট ঠেকাতে সে কোলে থাকা নবজাতককে পাশে এক নারীর কাছে দেয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বাচ্চা নিতে গিয়ে দেখে ওই নারী সেখানে নেই। মুহূর্তের মধ্যে পুরো হাসপাতালে শোরগোল পড়ে যায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে তোরাব আলীর পরিবার।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তোরাব আলী বলেন, ঘটনার সময় এখানে কর্তব্যরত আনসারদের সামনেই তারা আমাদের মারধর করে। কিন্তু আনসাররা কোনো কথা বলেনি। কী কারণে তারা চুপ ছিল সে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। এ ছাড়া শিশু চুরির পর চালক ও হামলাকারীরা মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল ঘিরে অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। অবাধে তারা হাসপাতালের অভ্যন্তরেও প্রবেশ করছে। অসুস্থ ব্যক্তি বা কোনো মরদেহ, কিংবা গর্ভবতী মা কেউই রক্ষা পায় না সিন্ডিকেটের কবল থেকে। মুমূর্ষু রোগীকে ঢাকা বা উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিতে বাড়তি টাকা দাবি করে চালকরা।

গাড়ির সিরিয়ালের কথা বলে অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না। বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স আনলে বা দাবি করা টাকা না দিলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার একাধিক ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে শিশু চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের সিসি ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে। খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক জানান, শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সিসি ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, র‌্যাব এরই মধ্যে সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল হাসান বলেন, শিশু চুরির ঘটনায় আবাসিক কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যদি কারও কর্তব্যে গাফিলতি পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর