মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

১৪ বছরে রাজস্ব বেড়েছে চার গুণ

প্রতি বছর গড়ে ১১.৪১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

১৪ বছরে রাজস্ব বেড়েছে চার গুণ

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয় ১৪ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আদায় হয় ৫৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১৪ বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় চার গুণ (৩.৯৫)। আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন, নীতিগত পরিবর্তন, কায়িক পরীক্ষা বৃদ্ধি ও মামলা নিষ্পত্তির কারণে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, এক যুগে রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন পুরনো পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় হয় না। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রতিটি পণ্যের কায়িক পরীক্ষার ফলে রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা কমেছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, বকেয়া রাজস্ব আদায়ে জোর দেওয়া এবং সরকারিভাবে কিছু নীতিগত পরিবর্তনের ফলে রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তবে ২০১৪ সালের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং করোনা মহামারি না হলে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ত বলে জানান কাস্টমসের কর্মকর্তারা। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দর এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে আসা পণ্যের শুল্ক আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এডিশনাল কমিশনার মো. জাকির হোসেন জানান, রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড হয়েছে। আগের চেয়ে গোছানো পদ্ধতিতে রাজস্ব আদায় হচ্ছে। আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়নে ভ্যালুয়েশন ঠিকভাবে হচ্ছে, এইচএস কোড (হারমোনাইজড সিস্টেম কোড)-সহ কাস্টমসের সব আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে মানার ফলে শুল্ক ফাঁকি কমেছে। এসব কারণে রাজস্ব আয় এবং প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।

কাস্টম হাউস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত ১৩ অর্থবছরে প্রতিবছর গড়ে ১১.৪১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। করোনা মহামারিতে রাজস্ব আদায় কিছুটা কমে গেলেও করোনার ঢেউ কেটে ওঠার পরের বছরে রেকর্ড ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। যা গত এক যুগে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ২০০৯-১৪ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৯.৩০ শতাংশ, ২০১৪-১৯ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৩.৫৮ শতাংশ এবং ২০১৯-২২ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১১.৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। চলতি অর্থবছর ৭৪,২০৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রথম ছয় মাসে ৩০,১৮০ কোটি টাকা আদায় হয়, যা গত বছরের তুলনায় ২,৮৯৬ কোটি টাকা বেশি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে মনে করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান বলেন, ‘অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাস্টমসের রাজস্ব আয়ে ধারাবাহিক উন্নতি দরকার। যে ধারা অব্যাহত আছে সেটা খুবই ইতিবাচক।’

চট্টগ্রাম কাস্টম সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৪,৯৬২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ০.৭২ শতাংশ কম। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে বাড়তে থাকে। ওই অর্থবছরে ১৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা আদায় হয়। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ০.৬৫ শতাংশ ও আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের আগ পর্যন্ত কাস্টমসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা চলমান ছিল। এর মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.৭৫ শতাংশ ও আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১.২০ শতাংশ ও আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে থেকে দেশব্যাপী নানা জনবিধ্বংসী রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানি রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে রাজস্ব কমতে থাকে। ওই বছর আগের বছরের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯.৮১ শতাংশ কম ছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের তুলনায় ১,৪৮০ কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েও অর্জন সম্ভব হয়নি। ওই বছর ২৩,২৩৭ কোটি টাকা আদায় হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১,১৭৩ কোটি টাকা কম এবং আগের বছরের তুলনায় ০.৪৮ শতাংশ কম।

২০১৪ সালে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজস্ব আদায়ে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি শুরু হয়। ২০১৪-১৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের তুলনায় ২,৫২৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৬,৯৩৪ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ার পরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১০ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.১৫ এবং আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এরপর করোনা মহামারির দুই বছর রাজস্ব আদায় কমে গেলেও বাকি বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে কাস্টম। এর মধ্যে ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৫, ১৭ ও ১৬ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়।

এর ধারাবাহিকতায় লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ আরও বাড়ায় কাস্টমস। কিন্তু করোনার কারণে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় মাত্র ২.৯১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ দিকে করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে আমদানি-রপ্তানি কমে গেলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় আরও ৩.৯৬ শতাংশ কমে যায়। তবে ২০২০-২১ সালে আবারো ঘুরে দাঁড়িয়ে আগের বছরের তুলনায় ২৩.২৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়। যা ছিল গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪.৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর