মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাকরির প্রতারণায় গ্রেফতার ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে নোয়াখালীর বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে গণপূর্ত অধিদফতরে চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা আদায় করেন। অধ্যাপকের এমন ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত শত শত চাকরিপ্রত্যাশী। ঢাকা ও রাজবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অধ্যাপক আলমগীরসহ চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অন্য সদস্যরা হলেন- রেজাউল হক টিটু, হুমায়ুন কবির, পলাশ চন্দ্র সরকার, মো. আসাদুল হক, জাহিদ হাসান ও আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু। তাদের কাছ থেকে শত শত আবেদনপত্র, প্রার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষার মূল সনদ, লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, শত শত নিয়োগপত্র, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ব্যাংক চেক, নগদ টাকা, মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, গত বছরের ৬ এপ্রিল গণপূর্ত অধিদফতরের ১৪ থেকে ১৬ গ্রেডের বিভিন্ন পদে ৪৪৯ জনের নিয়োগের একটি বিজ্ঞাপন দেয়। এই বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতারক চক্রটি চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা কনডাক্ট করে বারকোড সংবলিত হুবহু ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল।

এক পর্যায়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের অভিভাবকরা দেখেন বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বারকোড পর্যন্ত সবই ভুয়া।

অধ্যাপক আলমগীরের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে চাপ সৃষ্টি করেন চাকরি প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। টাকা ফেরত না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে বিষয়টি ডিবির নজরে আসে। গ্রেফতারকৃত চক্রটি বৃহত্তর যশোর-কুষ্টিয়া, রংপুর-রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফরিদপুর ও বরিশালে তাদের স্থানীয় দালাল দিয়ে স্নাতক পাস করা নারী-পুরুষদের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে নিশ্চিতভাবে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫ থেকে ১২ লাখ টাকা নগদ অথবা চেকের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।

ডিবি কর্মকর্তা মশিউর আরও বলেন, এই চক্রের মূল হোতা অধ্যাপক আলমগীর ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জনের জন্য নোয়াখালী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ‘বিশেষ কোটায় আলাদাভাবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে এই নিয়োগ দেওয়া হবে’ বলে প্রচারণা চালান। এ জন্য তারা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় গণপূর্ত ভবনসহ অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একক বা গ্রুপভিত্তিক পরীক্ষার্থীদের নিয়ে এসে লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। পরে পাস সংগ্রহ করে সচিবালয়ে প্রবেশ করে কোনো একটা রুমে নিয়ে গিয়ে নিজেরাই ইন্টারভিউ নিয়ে পরীক্ষার্থীর মাথায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে ‘খুব ভালো করেছো’ বলে বিদায় দেয়। গ্রেফতার রেজাউল হক টিটু, হুমায়ুন কবিরসহ সবাই প্রতারণার একাধিক মামলার আসামি। তারা এর আগেও সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের নিয়োগসংক্রান্ত জালিয়াতি কাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর