দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ হাওর হাকালুকি হতে পারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পরিকল্পিতভাবে হাওরের উন্নয়ন হলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে পর্যটনে সম্ভাবনাময় এ হাওর অবহেলায় পড়ে আছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও এ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি হাকালুকিতে। এদিকে একটি মহল প্রতি বছর হাওরের বিল শুকিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ লুট করছে। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ও দেশের অন্যতম মিঠা পানির মৎস্যভা ার খ্যাত হাকালুকির আয়তন ১৮.১১৫ হেক্টর। হাওরে দিন দিন কমছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। হাকালুকিতে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ থেকে বর্তমানে ৪৪ প্রজাতিই বিলুপ্ত। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন, প্রজননের সময় অবাধে মৎস্য শিকার, অভয়াশ্রমের অপ্রতুলতাসহ নানা কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব দেশীয় মাছ।
জেলা মৎস্য অধিদফতর ও হাওরের প্রতিবেশে এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কাজ করা এনজিও সংস্থার তথ্যমতে, দেশের মৎস্যভা ারখ্যাত হাকালুকিতে সরকারি ২৩৮টি ও বেসরকারি ৩৮টি বিল রয়েছে। এ হাওরে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ ছিল। যা বিলুপ্ত হতে হতে বর্তমানে ৬৩টি প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় ৪৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম হলো চিতল, পাবদা, রানি মাছ, আইড়, চাপচেলা, মেনি মাছ, গুজি আইড়, দেশি সরপুঁটি, ফেনী মাছ, বাতাসি ও বাঁশপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় সুস্বাদু মাছ। সম্প্রতি হাকালুকি হাওরে বেড়াতে যাওয়া সাংবাদিক ইউনুছ চৌধুরী বলেন, পরিকল্পিতভাবে হাকালুকির উন্নয়ন হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয়দের অনেক কর্ম সংস্থান হবে।
এ প্রসঙ্গে হাকালুকির কবি খ্যাত সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি কালাম আজাদ বলেন, ‘সমুদ্র দেখার আগে, আমাদের নিকট হাকালুকি ছিল সমুদ্র। হাকালুকির পাড়ে এলে নিজের অতি ক্ষুদ্র অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। তিনি হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি হাওর রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। হাকালুকিতে বেড়াতে যাওয়া মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান জানান, হাকালুকির সৌন্দর্য অপরূপ। এ সৌন্দর্য দেখতে বিপুল পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। হাকালুকির নাগুয়া বিলে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এমনটা করা জরুরি বলে তার মন্তব্য। আধুনিক ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আশরাফ আলী বলেন, পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনা রয়েছে হাকালুকি হাওরে। এক্ষেত্রে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। বিল থেকে অবাধে মাছ আহরণ বন্ধ করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে হাওরে বেড়ানোর জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা জরুরি। হাকালুকি যুুবসাহিত্য পরিষদের সভাপতি এম এস আলী বলেন, চারপাশ দিয়ে হাওরে প্রবেশের রাস্তার উন্নয়ন জরুরি। এক্ষেত্রে ডুবন্ত রাস্তা করা যেতে পারে। বাইরের পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য হাওরের কয়েকটি পয়েন্টে রেস্ট হাউস করলে পর্যটক আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, হাকালুকি হাওর নিয়ে আমাদের মাস্টার প্লান রয়েছে। শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।