রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ

পিলখানা হত্যাকান্ড - নেপথ্যের ঘটনা উদ্ঘাটনের দাবি স্বজনদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ

অশ্রু, দোয়া আর ফুল দেওয়ার মাধ্যমে স্মরণ করা হয়েছে পিলখানা হত্যাকান্ডে শহীদ সেনাসদস্যদের। গতকাল সকালে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা এবং তিন বাহিনীর প্রধান ও পরিবারের সদস্যরা এতে অংশ নেন। এদিন পিলখানায় ১৪ বছর আগে যে সেনা কর্মকর্তারা নিহত হয়েছিলেন, সেই বিদ্রোহের পেছনের ঘটনা উদ্ঘাটন চান তাদের স্বজনরা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নিজেদের এই চাওয়ার কথা জানান তারা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার সদর দফতরে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। সব মিলিয়ে প্রাণ হারান ৭৪ জন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত ২০১৩ সালে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। বিস্ফোরক মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। ২০১৭ সালে হাই কোর্ট হত্যা মামলার আপিলে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় দেন। পিলখানা হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কারণ খুঁজতেও সরকারকে পরামর্শ দেন উচ্চ আদালত। আদালতের সেই পরামর্শ উপেক্ষিত থাকার কথা গতকাল শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বলেন স্বজনহারা কয়েকজন।

নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমানের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। সেই কমিটি তদন্ত করে দেখবে, পর্দার আড়ালে কী ছিল। পেছনের ব্যক্তিদের খুঁজে বের না করে ফাঁসি কার্যকর করলেও কার্যত কোনো লাভ  হবে না। কারণ পর্দার আড়ালের ব্যক্তিদের আমরা চিনতে পারলাম না।’

মেজর মোহাম্মদ মাকসুম-উল হাকিমের বয়োজ্যেষ্ঠ শ্বশুর বলেন, ‘সরকার ডাকে তাই আমরা আসি। শোকসভা করে চলে যাই। ডেথ রেফারেন্স যে আটকে আছে, এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ হলে আমরা রায়টা দেখতে পাব। সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছি।’

নিহত মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বিচার সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিচার পাব না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার হবে না, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার সম্ভব নয়।’ শাকিল আহমেদের ছোট বোন রুবিনা নেসা বলেন, ‘দীর্ঘদিন হয়ে গেল। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে আছে। আশা করছি কিছু একটা বিচার পাব। আমরা পরিবারের সবাই সেই অপেক্ষায় আছি।’

এর আগে দিনের শুরুতে সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহতদের স্মৃতিস্তম্ভে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবদুল হান্নান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নূর, নৈতিক সমাজের চেয়ারম্যান আমসা আ আমিন ফুল দেন স্মৃতিস্তম্ভে। রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে প্রয়াত সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

শহীদদের স্মরণে বিজিবির শাহাদাতবার্ষিকী পালন : গতকাল বাদ ফজর থেকে জোহর পর্যন্ত শহীদদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানার বিজিবি সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের মসজিদগুলোতে খতমে কোরআন আয়োজন করা হয়। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে বিজিবির সব স্থাপনায় রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং বিজিবির সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করেন।

এ ছাড়া বাদ আসর পিলখানার বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সব মসজিদে এবং বাদ মাগরিব বিজিবির সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের মসজিদ এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর