সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা। শনিবার রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘ, জামায়াতে ইসলামী এবং যুদ্ধের সময় সংগঠিত শান্তি কমিটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। গতকাল রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩-এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গাইবান্ধার কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে হত্যাকান্ডের শিকার আকবর আলীর ছেলে আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৩ সালে গাইবান্ধার নিম্ন আদালতে আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, আবদুর রহিম, আবু সালেহ, আবদুল লতিফ, রুহুল আমিন ও নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আসামি করে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন তিনি কখনোই আদালতে হাজির হননি।

মামলা রুজুর পর থেকেই তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভীর তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত প্রতিটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করেন। এই মামলার অভিযুক্ত অন্য পাঁচজন আসামির মধ্যে বর্তমানে একজন জর্ডানে অবস্থানরত, একজন কারাগারে, দুজন পলাতক রয়েছেন এবং একজন পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ বলেন, গ্রেফতার আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী প্রায় তিন বছর সুন্দরগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ২০১৬ সালে তিনি আগের জায়গা থেকে পালিয়ে গাইবান্ধা তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত বেলকার চর নামক নির্জন একটি চরে গিয়ে আত্মগোপনে থাকেন। সেখানে তিনি দিনমজুরির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

পরবর্তীতে ২০২১ সালে ঢাকায় পালিয়ে এসে আশুলিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। এখানেও প্রথমে দিনমজুরি এবং পরে গৃহ শিক্ষকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন তিনি ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনামে করে নিজের পরিচয় দিতেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেমরা এলাকায় একটি বস্তিতে বসবাস শুরু করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে ওই বস্তি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শান্তি কমিটির দুর্ধর্ষ ডাকাত আবদুর রহিম মিয়া এবং আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আবু সালেহ, আবদুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুলসহ আরও কয়েকজন কুখ্যাত রাজাকার এবং পাকিস্তানি আর্মিদের একটি দল নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মালীবাড়ি গ্রামের গণেশ চন্দ্র বর্মণের বাড়িতে হামলা করে লুটপাট এবং বাড়ির সদস্যদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আগুন দিয়ে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর গণেশ চন্দ্র বর্মণকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্ধত হলে তার স্ত্রী, পুত্র, বন্ধু আকবর আলী এবং প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী ও মনসুর আলী এগিয়ে এলে তাদের সবাইকে আবু মুসলিম মোহাম্মদ এবং তার সহযোগীরা মারপিট করে।

একপর্যায়ে তাদের আটক করে নিকটবর্তী দরিয়াপুর ব্রিজে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গণেশ চন্দ্র বর্মণকে হাত-পা বেঁধে সারা শরীরে নৃশংসভাবে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয় এবং মৃতদেহের সঙ্গে ইট ও পাথর বেঁধে এমনভাবে নদীতে ডুবিয়ে দেয় যাতে লাশটি ভেসে উঠতে না পারে। আটককৃত আকবর আলী, মোহাম্মদ আলী এবং মনসুর আলীকে তারা কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে মারধর ও নির্যাতন করে। আকবর আলীকে তারা উপস্থিত অন্য দুই ব্যক্তির সামনে বৈদ্যুতিক শক এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ক্যাম্পেই হত্যা করে। পরের দিন বিকালে অন্য দুই ব্যক্তি মনসুর আলী এবং মোহাম্মদ আলীকে তারা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর এরা কোনো রকমে পালিয়ে জীবন বাঁচায়।

সর্বশেষ খবর