চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. গোলাম ইয়াজদানীকে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি ঠিকাদারের মারধরের শিকার হন তিনি। এর পর থেকে ছুটিতে আছেন। ঘটনার পর প্রায় দেড় মাস হলেও কর্মস্থলে যোগ দেননি তিনি। চসিকও নতুন করে কাউকে দায়িত্ব দেয়নি। যোগ দেননি চসিকের সর্বশেষ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সাধারণ সভায়। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কী হবে নগর উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি কি মুখ থুবড়ে পড়বে? স্থবিরতা দেখা দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নে? এরই মধ্যে প্রকল্পের অধীনে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭ ভাগের কাজের ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছিল। জানা যায়, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ড. গোলাম ইয়াজদানীর ওপর ২৯ জানুয়ারি নিজ কার্যালয়ে হামলা করা হয়। চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের চারতলায় প্রকল্প পরিচালকের ৪১০ নম্বর কক্ষে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা প্রকৌশলীকে মারধর করে টেবিলের কাচ এবং দরজার বাইরের নামফলক ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় চসিক ১০ জন ঠিকাদারের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত ১০ ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করে চসিক। এ ছাড়া চসিকের গঠিত তদন্ত কমিটিও উন্নয়ন কাজে নানা অসংগতির কথা উল্লেখ করে এবং নিরাপত্তা জোরদার ও টেন্ডারের গোপনীয়তা রক্ষায় ১৪টি সুপারিশ করে। চসিকের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন বলেন, বড় প্রকল্পটির পরিচালক এখনো চসিকে যোগ দেননি। তাছাড়া কাউকে নিয়োগও দেওয়া হয়নি। আসলে প্রকল্পটির পুরো বিষয়টি গোলমেলে। কিছু ঠিকাদার একাধিক কাজ পাচ্ছে, আবার অনেকের লাখ লাখ টাকা চসিকে আটকে থাকার পরও কাজ পাবে না। তাই আমি বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনাটির সমাধান করার জন্য গত সাধারণ সভায় বলেছি। চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ বলেন, প্রকল্পটির পরিচালক এখনো চসিকে যোগ দেননি। তবে তিনি ঢাকা অফিস থেকে অনলাইনে কাজ মনিটরিংসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
প্রকৌশলী ড. গোলাম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমি এখনো চসিকে যোগদান করিনি। কখন করব তাও এখনো ঠিক করিনি। তবে বিষয়টি আমি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি। তিনি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শমতে সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ ঢাকা থেকে মনিটরিং করছি। এতে কাজের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’ চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার প্রকল্পটির সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করা হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে মোট ব্যয়ের ৮০ শতাংশ সরকারি তহবিল এবং ২০ শতাংশ চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করার কথা। পুরো প্রকল্পে নগর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে ওভারপাস নির্মাণ, সড়ক, পদচারী সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, গোলচত্বরসহ নানা ধরনের উন্নয়নকাজ। প্রকল্পের উন্নয়নকাজের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের বিমানবন্দর সড়কে ৬০০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা।৩৮টি পদচারী সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৮ কোটি টাকা। ১৪টি সেতু নির্মাণে ৫৬ কোটি টাকা এবং ২২টি কালভার্টে ব্যয় ১৪ কোটি টাকা। ১০টি গোলচত্বর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি টাকা। ৭৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার উন্নয়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ৫৭ কোটি টাকা। সেবা সংস্থার পাইপলাইন অপসারণ খরচ ধরা হয় ২০ কোটি টাকা।