দেশের অন্যতম স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ৯০ জন। এর প্রায় ৩৫ শতাংশই কলেরায় আক্রান্ত। এ হাসপাতালে বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ৭০ জন নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হন। এর অধিকাংশই চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দা।
চট্টগ্রামে তীব্র দাবদাহে বাড়ছে ডায়রিয়া। এখন ডায়রিয়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে কলেরা রোগ। আক্রান্তের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধও আছে। তবে কোনো রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থা তৈরি হয়নি। হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারেও বাড়ছে ডায়রিয়া ও কলেরার রোগী।
জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু বিভাগে বুধবার ৫৮ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি করা হয়। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে ভর্তি হন মোট ২২৮ জন। গত চার মাসে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৫৬৭ জন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গতকাল ২৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে বয়স্ক নারী-পুরুষ ২২ ও শিশু ছয়জন। তা ছাড়া বিআইটিআইডিতে ভর্তি আছেন ৯০ জন।শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, উপযুক্ত তাপমাত্রায় খাবার না থাকা, পানিস্বল্পতা ও অতিমাত্রায় গরমের কারণে শিশুরা এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই শিশুকে অবশ্যই ফুটানো পানি পান করানো, সতর্কাবস্থায় খাবার খাওয়ানো এবং অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা করতে হবে।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ বলেন, তীব্র গরমের কারণে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। হাসপাতালে শয্যার বাইরেও রোগী ভর্তি করাতে হচ্ছে। সব রোগের রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। বিশুদ্ধ খাবার ও পানি পান করলে ডায়রিয়া থেকে বাঁচানো যায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিআইটিআইডির মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, এ হাসপাতালে ১২০টি শয্যা আছে। এর মধ্যে ৯০ জন রোগীই ডায়রিয়ার। তা ছাড়া ৩৫ শতাংশ কলেরায় আক্রান্ত। দৈনিক চার-পাঁচ জন রোগী এমন মারাত্মক অবস্থায় আসেন, যাদের হাত ও পায়ে একসঙ্গে স্যালাইন পুশ করতে হয়। এক সপ্তাহ ধরে এ প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম, জনবল, স্যালাইন-ইনজেকশনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ থাকায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা জামাল বলেন, এখন চলছে সিজনাল ডায়রিয়া। এটিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বলা যায়। তাই সবাইকে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এখন রাস্তাঘাটের শরবত ও খাবার পরিহার করা, ফুটিয়ে পানি পান করা, সব ধরনের ফ্রুটস ধুয়ে খাওয়া, বাসি খাবার না খাওয়া, সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়গুলো মানতে হবে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। মজুদ আছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী। তাছাড়া ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি বিশেষ টিম। জরুরি প্রয়োজনের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ডায়রিয়া মোকাবিলায় আছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি।